ড্যাফোডিলে ‘মাদক বিরোধী সেমিনার ও আলোচনা সভা’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
‘মাদকসেবীরা নিজেরাই নিজেদের হন্তারক। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে খুন করে। এটা এক ধরনের আত্মহত্যা। এই ভয়াবহ আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে মানস ((মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা) আয়োজিত মাদকবিরোধী সেমিনার ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, এমপি।
তিনি বলেন, সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হলে মাদকের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যারা মাদকে আক্রান্ত তাদেরকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য পরিবার, বন্ধু শিক্ষকদের অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী জীবিকা নাকি জীবন? আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসি জীবন গড়তে, জীবিকা নির্বাহের জন্য নয়। সুতরাং জীবনে বড় হতে হলে মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাদকের পেছনে সময় ব্যয় করে জীবন নষ্ট না করার আহ্বান জানান তিনি। মাদকসেবীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, মাদক ছাড়তে হলে একবারেই ছাড়তে হয়। একটু একটু করে মাদক ছাড়ার কোনো উপায় নেই।
প্রতিবাদ, প্রতিরোধের নামে সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর না করার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করলে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। এসময় তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের প্রসংশা করে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত নয়। তারা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামী দিনে দেশ পরিচালনার নেতৃত্বে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের এই রাজনীতিক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, পৃথিবীতে আজীবন আমরা কেউ থাকবো না। সবাই একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে এসেছি। এই সময়ের একটা বড় অংশ যদি মাদকের পেছনে ব্যয় করি তাহলে ভালো কাজ করব কখন? সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সবারই দায়িত্ব আছে। সেসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন মো. সবুর খান। তিনি বলেন, শুরু থেকেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্র্সিটি ধূমপান মুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ-পাশ এলাকাকে ধূমপানমূক্ত করতে ও সিগারেটের উন্মুক্ত দোকান সমূহ উচ্ছেদ করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারের সভাপতি ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, সমাজে যত ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে, তার অর্ধেক সংঘটিত হয় মাদকসেবীদের মাধ্যমে। মাদক মানুষের মস্তিষ্ককে নিস্ক্রিয় করে ফেলে। ফলে ভালো ও মন্দ কাজের পার্থক্য বুঝতে পারে না মাদকসেবীরা।
বাংলাদেশকে একটি তারুণ্যপ্রধান জাতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিপুল সংখ্যক তরুণকে বিপথগামী করতে দেশি বিদেশি নানা চক্রান্তকারী তৎপর রয়েছে। এদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন ড. অরূপ রতন চৌধুরী। তিনি বলেন, পাপকে ঘৃণা করতে হয়, পাপীকে নয়। মাদকসেবীরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদেরবে দূরে সরিয়ে রেখে মাদকমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব নয়। তাদেরকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডলি ইন্টারন্যশনাল ইউনির্ভাসিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও মূল-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানস এর সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং শব্দ সৈনিক (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র) অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী। স্টুডেন্ট এফেয়ার্সের কর্মকর্তা ফাহমি হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডলি ইন্টারন্যশনাল ইউনির্ভাসিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুব উল-হক মজুমদার,কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম ও মানসের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান তালুকদার।