রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো ‘মাই ই-কিডস্ ক্যাম্প’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
শিশুরা হচ্ছে ফুলের কুঁড়ির মতো। এদের পরিপূর্ণ দায়িত্বশীলতার সাথে সযত্ন লালনের মাধ্যমে উপযুক্ত পরিবেশে বিকশিত করে তুলতে পারলেই তারা সৌরভ ছড়াতে সক্ষম হবে। আর আমাদের অভিভাবকদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই উপযুক্ত পরিবেশের নিশ্চয়তা প্রদান করা। বর্তমান এ ডিজিটাল যুগের সাথে তালমিলিয়ে চলতে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আজ শনিবার (১২ আগস্ট) তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘মাই ই কিডস’এর আয়োজনে ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘তৃতীয় মাই ই-কিডস ক্যাম্প ২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “To Excel in Creativity with ICT”.
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল পরিবার ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ই এম কে সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম কে আরেফ। মাই ই-কিডস্ ক্যাম্প ২০১৭ এর আহ্বায়ক রাহিমা কে মির্জা রোজমেরীরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের ডীন অধ্যাপক ড. ফরিদ এ সোবহানী, স্টুডেন্ট এফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উপদেষ্টা ড. মাহমুদুল হাসান ও ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকিব খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই শিশু-কিশোররা খারাপ হয়ে যায় না, তারা খারাপ পথে যায় অভিভাবকদের উদাসীনতা ও অযত্নের কারণে। তিনি বলেন, সমাজের প্রতিটি স্তরে খারাপ উপাদান ছড়ানো রয়েছে, তাই বলে আমরা সমাজ থেকে বের হয়ে গিয়ে জীবনযাপন করতে পারি না। একইভাবে ইন্টারনেটেও ভালো-খারাপ সব ধরনের উপাদনই রয়েছে। সেজন্য ইন্টারনেট পরিত্যাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এসময় অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে মোস্তফা জব্বার বলেন, আমাদের প্রতিটি ছেলেমেয়ের মধ্যে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। তাদেরকে যত্নের সাথে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে বড় করুন, তারা সমাজের বুকে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ শিশু-কিশোর ও তরুণ উল্লেখ করে মোস্তফা জব্বার বলেন, এই বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোররাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। আগামী ১০/১৫ বছর পর এই শিশু-কিশোররা কোন যোগ্যতা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে তা আমাদেরকেই ঠিক করে দিতে হবে। সারা পৃথিবী তথ্য প্রযুক্তিখাতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে শিশু শ্রেনী থেকেই কম্পিউটার শিক্ষা আবশ্যিক বলে মন্তব্য করেন মোস্তফা জব্বার। বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তবে শিশুদের জন্য আরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মতামত দেন তিনি। এসময় তিনি ‘মাই ই কিডস ক্যাম্প’আয়োজনকে ব্যতিক্রমী ও সময়পোযোগী উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন এবং এ ধরনের আয়োজন দেশের অন্যান্য স্কুলেও অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।
মোস্তফা জব্বার বলেন, শিশু কিশোরদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানকে বিকশিত করতে জাতীয় পর্যায়ে তেমন কোন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের শিশুদের পেগ্রামার হতে উৎসাহিত করতে এ বছর (২০১৭) বেসিসের উদ্যোগে জাতীয় শিশু পোগ্রামিং প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হবে।
দিনব্যাপী আয়োজিত ক্যাম্পে ছিল আইটি মেলা, ইন্টারনেট জোন, গেমস্ কর্ণার, প্রকল্প প্রদর্শনী, মাইন্ড ম্যাপিংসহ আইসিটি কুইজ কম্পিটিশন, লোগো প্রোগ্রামিং কম্পিটিশন, কম্পিউটির প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট, লেগো কম্পিটিশন ও কিডস এন্টারপ্রেনার সমাবেশ। ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি শিশুর মননশীলতা বিকাশের উপর শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য আয়োজন করা হয় Child psychology এবং Child care এর উপর ২টি ওয়ার্কশপ ও সেমিনার।
সমাপনী ও পুরস্কারবিতরনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ, কালের কন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফী, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, চ্যানেল-৭১ (একাত্তর টিভি) এর বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, স্বপ্নযাত্রার প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুপন রায়। দেশের তরুণ সমাজের কাছে জনপ্রিয় উদীয়মান তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওসামা বিন নুর, সালমান মুক্তাদির, রিজওয়ান খান ও শফিউল আলম।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সোবহানবাগে অবস্থিত (ড্যাফোডিল টাওয়ার) ৭১ মিলনায়তনে এবং আধুনিক কম্পিউটার ল্যাবে এসব প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অসংখ্য প্রতিযোগীর মধ্য থেকে প্রথমস্থান অর্জনকারীকে ‘সুপার কিড’এবং পরবর্তী ১ জনকে ‘টেকনকিড’হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হয় ল্যাপটপসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অংশগ্রনণকারী ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারীরক দেয়া হয় সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট। এছাড়া সকল প্রতিযোগীদেরও সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
মাই ই-কিডস একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার, যেখানে ৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স ভেদে ৫টি লেভেলে ১ বছর মেয়াদী ‘এমএস কম্পিউটার’এপ্লিকেশন এবং প্রোগ্রামিং শেখনো হয়। বাংলাদেশে মাই ই-কিডসই প্রথম প্রতিষ্ঠান যেখানে শিশুকিশোরদের বয়স ও চাহিদা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক কারিকুলাম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কোর্স শেষে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়ে থাকে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ধানমন্ডি, উত্তরা ও সোবহানবাগ শাখার প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে মাই ই-কিডস এর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। শিক্ষার্থীরা জানান এখান থেকে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ও প্রোগ্রামিং বিষয়ে অনেক কিছু তারা শিখতে পারছে যা তাদের ব্যাক্তিগত জীবনে কাজে লাগার পাশাপাশি শিক্ষাজীবনে বাড়তি আনন্দ যোগ করছে। কম্পিউটারের সঠিক ব্যাবহার শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে গ্লোবালাইজেশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছে।