‘কৃষক’ এর প্রচলিত সংজ্ঞা ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করেছি : শাইখ সিরাজ
- এনায়েতুর রহমান ও মেহেরাবুল হক
দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে গণমাধ্যমের কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে, কিন্তু সে সুযোগ যথেষ্ট কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে মনে করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল আই-এর পরিচালক শাইখ সিরাজ।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশন (জেএমসি) বিভাগ আয়োজিত আজ (সোমবার) অনলাইন বক্তৃতায় তিনি বলেন, “কৃষি সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে এ খাতে কাজ করতে যা দরকার, তা-হল আগ্রহ ও আন্তরিকতা। কৃষির উন্নয়নে গণমাধ্যমের কাজ করার অনেক সুযোগ থাকলেও তা যথেষ্টভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। ”
“বাংলাদেশে উন্নয়ন সাংবাদিকতা : সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক এ বক্তৃতায় জেএমসি’র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন। জেএমসি’র বিভাগীয় প্রধান ড. শেখ শফিউল ইসলাম শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।
কৃষি সাংবাদিকতার মাধমে টেলিভিশনকে কৃষকের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া “হৃদয়ে মাটি ও মানুষ” খ্যাত শাইখ সিরাজ তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে গল্প শুনিয়ে সাংবাদিকতার নবীণ শিক্ষার্থীদের সামনে দেশে কৃষি ও উন্নয়ন সাংবাদিকতার সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে কৃষি পেশা নিয়ে প্রচলিত ধারনা ভেঙ্গে দেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, “আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন কৃষক বলতে আলাদা একটা শ্রেণিকে বোঝানো হতো। আমি সে ধারনাকে ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কৃষি কাজ শিক্ষিত-অশিক্ষিত যে-কেউ করতে পারেন।”
তিনি বলেন, “আজ শহরের অনেক শিক্ষিত নারীও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। শহুরে বাসার বারান্দা বা ছাদে তাঁরা ফসল ফলাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও আজ মাঠে ছুটে যাচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন আধুনিক কৃষি প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়ে আসছেন।”
“এছাড়া, দেশের কৃষিফসল বলতে ছিল শুধু ধান আর পাট। এখান থেকেও বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা ছিল। মোটকথা কৃষিফসলে বৈচিত্র আনাই ছিল আমার লক্ষ। এখন দেশের মাটিতে স্ট্রবেরি, আপেলকুলসহ বহুধরনের ফুল ও ফলেরও চাষ হচ্ছে।”
শাইখ সিরাজ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে কৃষিখাত এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এবং বেকারত্ব হ্রাসে অবদান রাখতে পারে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কৃষি সাংবাদিকতা করতে হলে গতানুগতিক সাংবাদিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কৃষকের সাথে মিশে গিয়ে বিষয়ের গভীরে গিয়ে কাজ করতে হবে। ভাষা ও সংস্কৃতিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এছাড়া দেশের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোনো খাত উন্নয়ন সাংবাদিকতার বিষয় বলে উল্লেখ করেন। উদাহরণ হিসেবে মহামারীর এ সময়ে স্বাস্থ্যখাত উন্নয়ন সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, শাইখ সিরাজের অনুষ্ঠান “হৃদয়ে মাটি ও মানুষ” কৃষির আধুনিকায়ন, কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন, মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধ এবং সামগ্রিকভাবে একটি কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি চালু করায় অসামান্য অবদান রেখেছে, যা খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
ডিআইইউ ফ্যাকাল্টি অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সাইন্স- এর ডিন অধ্যাপক হামিদুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।
ড. শেখ শফিউল ইসলাম কৃষি সাংবাদিকতা ও শাইখ সিরাজের “হৃদয়ে মাটি ও মানুষ” নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে দেশের কৃষি সাংবাদিকতায় শাইখ সিরাজের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠান সঞ্ছালনায় ছিলেন জেএমসি’র শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম রাতুল। তিনি শুরুতে কৃষি ও উন্নয়ন সাংবাদিকতার উপর খোলা একটি কোর্সের কন্টেন্ট সবার উদ্দেশে তুলে ধরেন। কোর্সটি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অনলাইন শিক্ষা প্লাটফর্ম বিএলসিতে ডিজাইন করা হয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।