আড্ডা জমুক, পড়াশোনাও চলুক
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
অনেকেই মনে করেন আড্ডা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, আড্ডা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে অতুলনীয় ভূমিকা রাখে। আড্ডায় শুধু গালগপ্পো না করে সৃজনশীল আলোচনাও চলতে পারে। এমনকি পড়াশোনাও হতে পারে। আড্ডাচ্ছলে এই পড়াশোনাটাকেই বলা হয় স্টাডি সার্কেল। তবে স্টাডি সার্কেলের নামে শুধু গল্প-গুজব কখনোই কাম্য নয়। কেননা পরিকল্পিতভাবে স্টাডি সার্কেল গড়লে পড়াশোনা তো বটেই একাডেমিক কিংবা চাকরি যেকোনো পরীক্ষাতেই সাফল্য অর্জন সম্ভব।
শৌখিন অঙ্কে ভালো কিন্তু ব্যাকরণ ওর মাথায় ঢুকতেই চায় না। অমিত আবার অঙ্কে কাঁচা হলেও ব্যাকরণে খুব ভালো। তৃণা ইংরেজিতে ভালো হলেও বিজ্ঞানের জটিল সূত্রগুলো ওর কাছে দুর্বোধ্য লাগে। জুনায়েদ ইংরেজিতে দুর্বল এটা সবাই জানে, কিন্তু বিজ্ঞান ওর কাছে পানির মতো সরল। এইসব উদাহরণের মানে হলো সবাই সব বিষয়ে সমান দক্ষ হয় না। কেউ এক বিষয়ে ভালো, তো অন্য বিষয়ে দুর্বল। এ ক্ষেত্রে গ্রুপ স্টাডি বা সবাই মিলে পড়াশোনা ম্যাজিকের মতো ফল দেয়।
স্টাডি সার্কেল কী
স্টাডি সার্কেল অনেকটা টিমওয়ার্কের মতো। কয়েকজন বন্ধু মিলে একসঙ্গে পড়াশোনা করাকেই বলা হয় স্টাডি সার্কেল। যে যে বিষয়ে ভালো, সে সে বিষয়ে আলোচনা করে। আর এই আলোচনার মাধ্যমে কঠিন বিষয়গুলোও অনেকের কাছে পানির মতো সহজ হয়ে যায়। পাঠ্যবইয়ের পড়া ছাড়াও নোট তৈরি, অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত করা এসবও কাজও বন্ধুরা সবাই মিলে একসঙ্গে করতে পারে। স্টাডি সার্কেলর জন্য সাধারণত ক্যাম্পাস, লাইব্রেরি বা অনেক সময় শ্রেণীকক্ষও বেছে নেওয়া হয়। এ জন্য আলাদা কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। দেখা গেল ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরে বসেই চলছে স্টাডি সার্কেল। আড্ডায়-আলোচনায় অনেক জটিল বিষয়গুলোও বন্ধুদের সাহায্যে আয়ত্তে চলে আসছে।
কেন স্টাডি সার্কেল
বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা, নোট তৈরি, অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে লেখাপড়ার সব ক্ষেত্রেই সবাই মিলে পড়াশোনা খুবই কাজে লাগে। নোট করতে গেলে অনেক বই একসঙ্গে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তো রেফারেন্স বইয়ের কোনো সীমারেখা থাকে না। এত বই খুঁজে বের করা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি সময়সাপেক্ষ। অনেক সময় ইন্টারনেটে সার্চও করতে হয় বাড়তি তথ্যের জন্য। এ ছাড়া অ্যাসাইনমেন্ট বা নোট তৈরি করতে দেশি-বিদেশি পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, গবেষণাপত্র প্রভৃতিও ঘাটতে হয়। একা কারও পক্ষেই একসঙ্গে এত কাজ করা কষ্টকর। এসব কাজ যদি স্টাডি গ্রুপের বন্ধুদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া যায়, তাহলে অনেক সহজ হয়ে যায় পুরো কাজটি।
কেমন হবে স্টাডি সার্কেল
স্টাডি সার্কেল করার সময় সবাইকে কিছু না কিছু কাজ বা নোট করার দায়িত্ব দিতে হবে। যে যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাকে সে বিষয়ের দায়িত্ব দেওয়াই ভালো। আর নোট করার সময় সবাই একসাথে থাকলে ভালো হয়। তবে এক্ষেত্রে সময় সচেতনতাও জরুরি। নোট বা অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্য গ্রুপের কারও একটি বই নিয়ে আসার কথা। সে আসতে দেরি করছে বলে তার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। আবার অনেকেই একটি কাজে অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলে। এসব অভ্যাস বর্জন করতে হবে। আর হ্যাঁ, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার মতামত যাচাই করাটাও জরুরি।
গরল থেকে সরল
বইয়ের কোনো তত্ত্ব বা সূত্র মাথায় ঢুকছে না; ক্লাসে স্যারের গুরুগম্ভীর লেকচার বুঝতে পারোনি; কিংবা শ্রেণীকক্ষের পেছনের দিকে বসার কারণে স্যারের লেকচার পুরোপুরি শুনতেও পাইনি—এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি, এমন খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই খুঁজে পাওয়া যাবে। এসব পরিস্থিতিতে ঘাবড়ানোর কিছু থাকে না, যদি বন্ধুবান্ধব নিয়ে গঠিত হয় এমন একটি টিম, যার সদস্যরা সবাই মিলে একসঙ্গে পড়াশোনা করে। ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরে বসেই যদি সহপাঠীদের সঙ্গে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়, তবে আর সমস্যা থাকে না। যে বিষয়গুলো একসময় মাথায় ঢুকতেই চাইত না, দেখা যাবে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেই বিষয়গুলোই কত সহজ হয়ে যায়!
পড়াশোনা হোক আলোচনার মাধ্যমে। বন্ধুদের কারও কাছে একটি বিষয় জটিল লাগছে, যে বিষয়টি ভালো বোঝে, সে তা বুঝিয়ে দিল। আবার যে যে বিষয়ে দক্ষ, সে সবার মধ্যে বিষয়টি সহজভাবে আলোচনা করল। এতে কোনো বিষয়ই গ্রুপের কারও কাছেই জটিল মনে হবে না। যে বিষয়টা শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে লজ্জা বা সংকোচের কারণে জিজ্ঞাস করতে পারে না, বন্ধুদের কাছে অনায়াসেই সে প্রশ্ন করা যায়। আর শিক্ষককে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটি বিষয় দুবার জিজ্ঞেস করা যায় না, কিন্তু না বুঝতে পারলে বন্ধুদের কাছে বিষয়টি নিয়ে বারবার প্রশ্ন করা যায়।
এমন অনেক ছাত্র আছে, যারা পড়াশোনায় দুর্বল। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে দুর্বল ছাত্ররা ভালো ছাত্রদের সংস্পর্শে এসে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। পড়াশোনায় মন না থাকলে গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে সবার সান্নিধ্যে এসে পড়ায় মনোযোগও চলে আসে। কোনো বিশেষ বিষয়ে বারবার খারাপ করার কারণে অনেকের কাছে সেটি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই জিনিসগুলোই যদি সহপাঠীদের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া যায় তবে বিষয়টি সহজ হয়ে যায়। এভাবে সবাই মিলে পড়াশোনা করলে সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাসও চলে আসে। আর এই আত্মবিশ্বাস ভালো ফলাফল করতে সাহায্য করে।