ফেসবুক টুইটারে পড়াশোনা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
জজিফ। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র। সঙ্গে ব্যাচের ক্লাস রিপ্রেজেন্টটিভ তিনি। ব্যাচের প্রত্যেকটি ক্লাসের নোট এবং বিভিন্ন তথ্য তাকেই আদান-প্রদান করতে হয়। সেজন্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্লাসের সবাই মিলে একটি গ্রুপ খুলেছেন। জজিফ বা ক্লাসের অন্য যে কেউ এই গ্রুপে যে কোন কিছু আপলোড দিতে পারেন।
গ্রুপের প্রত্যেক সদস্যরা ক্লাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেখানে গঠনমূলক বিস্তর আলোচনা করেন। সমাধান মিলে বিভিন্ন বিষয়ের। এ তো গেল শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাসের কথা। আবার দেখা যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগের এরকম আলাদা একটি গ্রুপ রয়েছে। আবার তার বিপরীত দেখা যায় সারা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিপার্টমেন্ট মিলে একটি গ্রুপ। যেখানে ঢুঁ মারলেই মিলে যায় সেই ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন বিষয়ের পড়াশোনার খোঁজখবরসহ নানান বিষয়।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ নয় শিক্ষার্থীদের এই সকল কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেও বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দেয় কর্মক্ষেত্রের পরবর্তী প্রস্তুতির জন্য। যেমন- বিসিএস প্রস্তুতি, ব্যাংক চাকরি প্রস্তুতি, বিসিএস রিটেন প্রস্তুতি, বিভিন্ন সরকারি চাকরি প্রস্তুতি নামে অসংখ্য গ্রুপ আছে ফেসবুকে। অনেকেই নিয়মিত গ্রুপগুলোতে ঢুঁ মেরে পড়াশোনা করছেন এবং দারুণভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
বিসিএস প্রস্তুতি নামক একটি গ্রুপের সদস্য নেওয়াজ উদ্দিন খান বলেন, বিসিএস এর মতো একটি কঠিন পরিক্ষায় মোকাবেলা করতে হলে অনেক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় অনেক পড়াশোনার। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এই ধরনের পড়াশোনা করতে অনেকটা সহায়তা করছে।
তিনি আরো বলেন, দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে এই তথ্যমূলক ও শিক্ষামূলক গ্রুপগুলোর জন্য অনেক বইপত্র ক্রয় প্রয়োজন হয় না। হাজার হাজার শিক্ষার্থী যখন একটি বিষয় নিয়ে দিনের পর দিন আমরা আলোচনা করি বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই সমাধান হয়ে যায়। বিসিএসএ এখন আমার ভাইভার পালা, সেই জন্যও আমি আমার গ্রুপ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ পাচ্ছি।
জজিফ ও নেওয়াজের মতো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী আজ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পড়াশোনা করছেন। তথ্যপ্রযুক্তি আর সামাজিক উত্কর্ষতার সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে পড়াশোনার ধরনও। কোন অংশে পিছিয়ে নেই গ্রাম বা মফস্বল শহরের শিক্ষার্থীরা। প্রযুক্তি উৎকর্ষের এই যুগে এসে মানুষ ক্রমাগত সম্মিলিত হচ্ছে আন্তর্জাল বা ইন্টারনেটের ছায়াতলে। পরিশ্রমী শিক্ষার্থী তার মেধা-মননের একটা বড় অংশের প্রয়োগে তৈরি করেছে আন্তর্জাল নামক এক চমকপ্রদ পরিসর। যে পরিসরে নব্য যুক্ত হওয়া একটি ধারার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর এই মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, টুইটার এর মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো সৃষ্টি করেছে নতুন একধরনের পড়াশোনার পরিবেশ।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের ৭৬ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে আবার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেসবুকে শিক্ষামূলক বিভিন্ন গ্রুপের সাথে যুক্ত আছে এবং প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার তাদের সংশ্লিষ্ট গ্রুপে তারা নিয়মিত ডু মারছে। ওই পরিসংখ্যানে আরেকটি বিষয় দেখা যায় যে, ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ার টেবিলে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেসবুকে লগ-ইন করেন। তবে এতো কিছুর ভিতরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পড়াশোনাকে মারাত্মকভাবে ব্যবহ্নত করে। বিজ্ঞানের সুযোগ-সুবিধা বেড়ে যাওয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের মেধার বিকাশ ঘটানো এখন সময়ের দাবি।