পরিচয়পত্র নিয়ে ভোগান্তিতে বাকৃবির শিক্ষার্থীরা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বিগত তিন বছর ধরে ডিজিটাল পরিচয়পত্র সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কোষাগারে প্রায় ১৩ লাখেরও বেশি টাকা জমা দিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী। কিন্তু শুভংকরের ফাঁকির মতোই রয়ে গেছে ডিজিটাল পরিচয়পত্র। ২০১৪ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ডিজিটাল পরিচয়পত্র পেলেও ২০১৫ এবং ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা টাকা প্রদান করলেও আজ অবধি দেখা মেলেনি ডিজিটাল পরিচয়পত্রের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার স্বাক্ষরিত একাডেমিক শাখার এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের মেশিন রিডেবল ডিজিটাল পরিচয়পত্র দেয়ার নাম করে ফি ৩০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৫০ টাকা করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে প্রচলিত কাগজের পরিচয়পত্রের নির্ধারিত ফির বিপরীতে ২৫০ টাকা ফি নেয়া হয়। কিন্তু ডিজিটাল হয় না পুরো প্রক্রিয়াটি। কয়েক দিন পরেই আবার নতুন ধার্য ফি নিয়েই কাগজের পরিচয়পত্র দেয়া শুরু করে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বাকৃবিতে ২০১৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে এক হাজার, স্নাতকোত্তরে ৯৪৫ ও পিএইচডিতে ৭৫ জন, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে এক হাজার ২০০, স্নাতকোত্তরে ৮৩৪ ও পিএইচডিতে ৬৫ জন এবং ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে এক হাজার ২০০, স্নাতকোত্তরে ৩২১ (জানুয়ারি-জুন সেমিস্টার) ও পিএইচডিতে আটজন শিক্ষার্থী ভর্তি হন।
এর মধ্যে শুধু ২০১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের মাত্র ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক বিভাগ। কিন্তু ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদান না করা হলেও বাকিদের কাছ থেকে মেশিন নষ্ট থাকার অজুহাত দেখিয়ে ২৫০ টাকা জমাপূর্বক ৩০ টাকার লেমিনেটিংবিহীন কাগজের পরিচয়পত্র দিচ্ছে।
কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরে ডিজিটাল পরিচয়পত্র তৈরির মেশিন ক্রয় করা হলেও এখন পর্যন্ত তা অব্যবহৃত রয়েছে বলে জানা গেছে। উপরোক্ত শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র প্রদানে ছাত্রবিষয়ক বিভাগের কোনো পদক্ষেপই পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এদিকে প্রায় তিন বছর আগে প্রদানকৃত ডিজিটাল পরিচয়পত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। তাদের অভিযোগ, মেশিন রিডেবলের কথা বলে দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের প্লাস্টিক পরিচয়পত্র। শুধু তাই নয়, প্রদানকৃত পরিচয়পত্রের মান কোনোভাবেই ২৫০ টাকা নয় বলে দাবি অনেক শিক্ষার্থীর। অভিযোগের ভিত্তিতে ময়মনসিংহের একটি প্রেস জানায়, ভালোমানের একটি প্লাস্টিক পরিচয়পত্র তৈরি করতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া মেশিন রিডেবল ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রায় একই টাকার মধ্যে তৈরি করা যায়।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র না থাকায় প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন তারা। পরিচয়পত্র দেয়ার নামে আজ নয় কাল বলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে। শিক্ষবৃত্তি, মার্কশিট, সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনে পরিচয়পত্র আবশ্যকীয়। ডিজিটাল পরিচয়পত্র না পেয়ে ২৫০ টাকা প্রদান করে বাধ্য হয়ে ৩০ টাকা মূল্যের পরিচয়পত্র নিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ভর্তির সময় ২৫০ টাকা পরিচয়পত্রের জন্য প্রদান করলেও এখন ডিজিটাল পরিচয়পত্র পাইনি। পরিচয়পত্রের জন্য ছাত্রবিষয়ক বিভাগে যোগাযোগ করার পর তারা জানায় মেশিন নষ্ট। মাস্টার্সের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, পরিচয়পত্র নেয়ার জন্য ২৫০ টাকা জমা দিয়ে ছাত্রবিষয়ক বিভাগের পরিচয়পত্র সরবরাহ কক্ষে যোগাযোগ করলে তারা ৩০ টাকা মূল্যের আগের কাগজের পরিচয়পত্র দেয়। সেটিতে লেমিনেটিংও করা নেই। জিজ্ঞেস করার পর জানায় লেমিনেটিং মেশিনও নষ্ট। তাহলে আমাদের কাছ থেকে কেনো ২৫০ টাকা নেয়া হলো?
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. রাকিব উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র খাতে ২৫০ টাকায় ট্রেজারার সেকশনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন জানান, ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অনুষদের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রের কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রথম বর্ষের কাজ শেষ হলেই অতি দ্রুত অন্যদের পরিচয়পত্র দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে কাগজের পরিচয়পত্রটি দিয়ে ডিজিটালটি সংগ্রহ করতে হবে।
টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিচয়পত্র খাতের পুরো টাকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারেই জমা আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী কোষাধ্যক্ষের মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে।