মা-বাবার চাপিয়ে দেওয়া স্বপ্ন নয়, এটা একান্তই আমার নিজের স্বপ্ন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকে। মা-বাবার চাপিয়ে দেওয়া স্বপ্ন নয়, এটা একান্তই আমার নিজের স্বপ্ন। ঢাকা মেডিকেলে আমার জন্ম হয়েছে। এ কারণেই বোধ হয় আলাদা একটা টান ছিল।
সেই ২০১২, জানুয়ারির ৪ তারিখে হলো আমাদের নবীনবরণ। ৭ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু। এতটাই রোমাঞ্চিত ছিলাম যে ৪ তারিখেই আমি হোস্টেলে উঠে গেলাম। আমার মনে আছে, নয়টার ক্লাসে সকাল আটটায়ই উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলাম। নতুন জামার ওপর জীবনে প্রথমবারের মতো সাদা অ্যাপ্রোন চাপিয়েছি, অনুভূতিটাই অন্য রকম!
সকাল আটটায় আমাদের পুরো কলেজ ঘুরিয়ে দেখানো হলো। তারপর ক্লাস করার জন্য লেকচার গ্যালারির সামনে এসে দাঁড়ালাম। একদম ঠিক সময়ে বায়োকেমিস্ট্রির ক্লাস শুরু হলো। সে এক বি-শা-ল গ্যালারি। আমরা প্রায় ২০০ জন, আর গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। এক ঘণ্টার ক্লাসে মূলত সবার নাম-ঠিকানা, আর কেন মেডিকেলে পড়তে চাই, এসবই শিক্ষকেরা শুনলেন। আমি চেষ্টা করছিলাম সবার নাম মুখস্থ করতে, ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছিল যদিও।
পরের ক্লাস ছিল ১১টায়। অ্যানাটমি টিউটোরিয়াল ক্লাস। আমাদের ২০০ জনকে কয়েকটা গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হলো। আমি পড়লাম গ্রুপ ডি-তে। অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্টের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গা গুলিয়ে এল লাশের গন্ধে (তখন ঝাঁজালো গন্ধটা বিকট মনে হলেও পরে আস্তে আস্তে সয়ে গেছে)। ক্লাসে ঢুকেই দেখলাম, রুমের তিন কোণে তিনটা মৃতদেহ।
সেদিনের শেষ ক্লাস ছিল বায়োকেম। এই বিষয়ের সঙ্গে রসায়নের ভালোই মিল আছে মনে হয়েছিল প্রথম দিন। আমাদের কী কী বই কিনতে হবে তা-ও বলে দেওয়া হলো। এত্তগুলো ক্লাস করে রীতিমতো হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম। ক্লাস শেষ হতেই বের হয়ে দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর চোখ টলমল। আমাকে অ্যাপ্রোন পরা অবস্থায় দেখার জন্য নাকি তিনি সকাল থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি। মেডিকেলজীবন প্রায় শেষের পথে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এই তো কেবল সেদিন ভর্তি হলাম। কলেজে আমরা সবচেয়ে ছোট ছিলাম, আর সেই আমাদের ব্যাচটাই এখন সবচেয়ে বড়! প্রাণের ডিএমসিতে ভর্তি হতে পেরে আমি প্রথম দিন যেমন পুলকিত ছিলাম, আজও তা-ই আছি।
সাকিয়াহক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেষ বর্ষ