প্রজেক্ট দন্ত
- নাদিম মজিদ
পথশিশুদের সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছেন অনেক তরুণ-তরুণী। তারা বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করছেন। মৌসুমভেদে শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকেন অনেকে। চার তরুণের ভাবনায় এল নতুন কিছু। তারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ৮ অক্টোবর ঢাকার মোহাম্মদপুরে আয়োজন করেন ফ্রি ডেন্টাল ক্যাম্প। তাদের কর্মসূচি সম্পর্কে জানুন এই প্রতিবেদনে।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ছাত্র রায়হান গফুর। সাধারণত বড় ভাইয়েরা উদ্যোগ নিলে সেসব কার্যক্রমে সহযোগিতা করতেন। স্বেচ্ছাসেবায় আগ্রহী তরুণদের অনলাইন প্লাটফর্ম ইউনিফাইয়ের উদ্যোগে একটি কর্মশালায় মাসতিনেক আগে পরিচয় হয় আরো তিন তরুণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা হলেন— বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের দেবানিক চক্রবর্তী, সানিডেল স্কুল থেকে এ বছর এ লেভেল উত্তীর্ণ কারিশমা শায়ের এবং আনিকা আফরিন রেজা। তারা একসঙ্গে বসে ঠিক করেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে একটি ডেন্টাল ক্যাম্পের আয়োজন করবেন। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের লিডোতে আয়োজন করেন ‘প্রজেক্ট দন্ত’। প্রজেক্ট দন্তের সংগঠক আনিকা আফরিন রেজা জানান, ‘লিডোতে আমাদের ডেন্টাল ক্যাম্প হবে তা আগে থেকে ঠিক করা ছিল। তিনজন ডেন্টিস্ট সেদিন দুপুর থেকে লিডোতে স্কুলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ফ্রি ডেন্টাল চেকআপ করিয়েছেন। যাদের দাঁতের সমস্যা ছিল যেমন— দাঁতের ফিলিং করা, দাঁত তোলা প্রয়োজন— তাদের সে সমস্যাগুলো সমাধান করে দিয়েছেন। মোট ৫৫ শিশু আমাদের সেবা পেয়েছিল।’
চার সংগঠক ছাড়াও দলে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ছিলেন ১৫ জন। ডেন্টাল ক্যাম্প যেন একঘেয়ে হয়ে না যায়, সেজন্য স্বেচ্ছাসেবীরা সবার সঙ্গে গান গেয়েছিলেন। শিশুরা তাদের ঘিরে নেচেছিল। গানের কলি খেলেছিল।
একটি মজার ঘটনা জানতে চাইলে কারিশমা শায়ের জানান, ‘এক বাচ্চার একটি দাঁত বাঁকা হয়ে বড় হচ্ছে। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসা হলে ডাক্তার বললেন, ওর এখনই দাঁতটি ফেলে দিতে হবে। না হয় বড় হলে এটি গেজদাঁত হয়ে কষ্ট দেবে। ডাক্তার যখন তার দাঁত ফেলে দিতে গেল, তখন সবাই ভয়ে অস্থির। এই না ছেলেটি কান্নাকাটি শুরু করে। ডাক্তার এত দ্রুত তার দাঁত ফেলে দিলেন, ছেলেটির নিজেরও বুঝতে সময় লেগেছিল। সে কান্নাকাটি করার সুযোগ পায়নি।’
প্রজেক্ট দন্তের পেছনে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার টাকা। ইউনিফাইয়ের আইডিয়া প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ায় সেখান থেকে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ১২ হাজার টাকা, প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবী দিয়েছেন ৩০০ টাকা করে আর বাকি টাকা চার সংগঠক দিয়েছেন।
এ ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও নেয়া হবে বলে জানান রায়হান গফুর। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে দাঁতের গুরুত্ব সম্পর্কে জানানো। আমরা ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম হাতে নেব।’