সাংবাদিকতায় বহুমুখী ক্যারিয়ার
- বিপ্লব শেখ
ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আবার আমরা অনেকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগি, বুঝতে পারি না কোন দিকে ক্যারিয়ার গড়া ঠিক হবে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে ক্যারিয়ার সম্পর্কে পর্যাপ্ত বা সঠিক জ্ঞান না থাকা। আপনি যদি সাংবাদিকতায় আগ্রহী হন এবং এটা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হন তবে ক্যারিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতা হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ।
তবে অনেকের ধারণা এ বিষয়ে পড়ে কি হবে? সাংবাদিক? সাংবাদিকতায় তো অনেক ঝুঁকি রয়েছে। আবার বাংলাদেশে সাংবাদিকদের জন্য ভালো চাকরিও নেই। এসব নেতিবাচক ধারণার কারণ হচ্ছে এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা না থাকা।
সাংবাদিকতা বলতে আপনি কি বুঝেন? সাংবাদিকতা যারা করে তাদের সাংবাদিক বলে?
সাধারণত একজন সাংবাদিক সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন ও ওয়েব পোর্টালের জন্য খবর জোগাড় করা, সংবাদ ও কলাম লেখা, সম্পাদনা, পরিমার্জন, পরিবেশন ও ছবি সংগ্রহের কাজ করে থাকেন, এটাই সাংবাদিকতা।
কিন্তু জানেন কি? “সাংবাদিক” একটি পদবী মাত্র। এর পিছনে মস্ত বড় বিভাগ রয়েছে, যোগাযোগ ও গণমাধ্যম, যেখানে রয়েছে বহুমুখী ক্যারিয়ারের নিশ্চিত সুযোগ। কারণ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার বেশ উজ্জ্বল। আর সৃজনশীল মানুষদের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে এই বিভাগে। আবার দেশে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব মিডিয়ায় সহজেই ইচ্ছামতো ক্যারিয়ার তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছে্ এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। যে বিষয়ে যার আগ্রহ বা কৌতূহল রয়েছে ( যেমন: খেলাধুলা, অপরাধ, বিনোদন , পরিবেশ, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি) সে সেই প্লাটফর্মেই ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
এখানে আপনি সাংবাদিক হতে না চাইলেও আপনাকে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে না। আপনি পাবেন বিভিন্ন সেক্ট্ররে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ। কারণ মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়া ছাড়াও এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞাপনী সংস্থা, প্রকাশনা সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও ইন্সুরেন্সে গণসংযোগ কর্মকর্তাও হতে পারেন। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাবলিক রিলেশন অফিসার, বিদেশে স্কলারশিপ ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে পারেন। আবার বিভিন্ন এনজিওতে উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগও রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো অবস্থানে কাজ করা ও ভালো ফলাফল করে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ সহজেই পাচ্ছে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আবার অনেকের স্বপ্ন থাকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। আর সেই সুযোগও রয়েছে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের।
আবার স্বনির্ভর ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলেও এ বিভাগ এগিয়ে। কারণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ফিচার-প্রবন্ধ প্রতিবেদন লিখে, অডিও-ভিডিও টেক্সটে চমৎকার কনটেন্ট তৈরি করে নিজেকে পরিচিত করা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আয় করাটা বেশ সহজই এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য। কারণ মিডিয়া সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আর যোগাযোগ দক্ষতা থাকার ফলে অন্যদের তুলোনায় বেশ এগিয়ে থাকবে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এসব সেক্টরে কেন আপনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন?
পূর্বে সংবাদ মাধ্যমে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা বা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে ( যেমন- সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ) ডিগ্রি অর্জনের প্রয়োজন ছিল না। যে কোনো বিষয়ের শিক্ষার্থীরা চাইলেই বা আগ্রহ থাকলে সাংবাদিকতায় আসতে পারলেও বর্তমানে এটার জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে, যেখান থেকে ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। ফলে এ বিভাগ এখন পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক এবং সম্ভাবনাময়। আর এ বিভাগে সাংবাদিকতার পাশাপাশি অনেক বড় অংশ জুড়ে যোগাযোগের চর্চাও হয়। তাই এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ, বিশ্লেষণ, উপস্থাপন ও অনুসন্ধানের মতো কাজে দক্ষ হয়ে ওঠে। আর এসব দক্ষতার জন্যই এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞাপনী সংস্থা, প্রকাশনা সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগের মতো সেক্টরগুলোতে অন্য বিভাগের তুলোনায় এগিয়ে থাকে।
পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি আপনাকে পৌঁছে দিবে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়। যেখানে রয়েছে নিজের স্বপ্ন পূরণের সুবর্ণ সুযোগ। আর সাংবাদিকতা বিভাগটি হতে পারে আপনার সেই স্বপ্ন পূরণের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম।