আত্মশক্তি উন্নয়নের মহাশক্তি

আত্মশক্তি উন্নয়নের মহাশক্তি

  • মো. হুসাইন আলম

ছোটোবেলায় স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ব, আকাশ-বাতাসের সঙ্গে মিলে স্বপ্নরাজ্যের কথাগুলো জোরে চিৎকার দিয়ে বলব। পাখির মতো আনন্দে আত্মহারা হয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাব। স্বপ্ন যে আমার মহাস্বপ্ন হবে আর মহাস্বপ্ন থেকে মহাশক্তি হবে, আমি তা ভাবতেই পারি নাই। আকাশে উড়তে উড়তে আমি যে আকাশ ছোঁব আর খরার মাঝে বৃষ্টি হয়ে সবার মুখে মৃদু হাসি ফোটাব এবং অন্ধকারে জোনাকির মতো আলো না দিয়ে সূর্যের মতো আলো দেব, তা ভাবতেই আমার চোখের সামনে আসে আত্মশক্তির কথা, আত্মোন্নয়নের কথা।

এখানে একটু বলে রাখি, আমার পরিবারের সবাই যে উচ্চশিক্ষিত তা নয়। আমি উঠে এসেছি গ্রাম থেকে। গ্রামের ছেলেটা আজ ছুটে চলেছে সায়েন্টিফিক রিসার্চ কাজে পৃথিবীর এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্তে। আজ লিখছি ঘুমন্ত যুবকদের ঘুম ভাঙাতে। আমি আজ স্বপ্ন দেখাতে চাই বাস্তব স্বপ্নবিভোর যুবকদের। আজ লিখছি শিক্ষিত বেকার যুবকদের জোনাকির আলোয় নয়, সূর্যের মতো আলো দেখাতে।

সাফল্যের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয় না, ধনীর দুলাল হতে হবে না, শুধু লাগে আত্মবিশ্বাস। আমি যখন গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলাম, ৩০০ টাকায় প্রাইভেট পড়াতাম। ঢাকা থেকে যখন লন্ডনে গিয়েছিলাম, তখন দুই সপ্তাহ কিচেন পটারের কাজ করেছি মাত্র ৬০ পাউন্ড বেতনে। আমি আমার কথাগুলো কেন এভাবে বললাম, তার কারণ হলো, আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪.৪ মিলিয়ন। লেখাপড়া শেষে ফাইল হাতে এক অফিস থেকে অন্য অফিস করতে করতে চাকরির বয়স ও মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে অবশেষে ফিরে আসে পরিবারের কাছে শূন্য হাতে। আবার অনেকেই বিপথে চলে যায় মনোবল হারিয়ে। চিন্তায়-চেতনায় বিষণ্নতায় ভুগে আত্মবিশ্বাস চলে যায় যৌবনের উদ্দীপ্ত সময়ে। যে বয়সে যুবকের থাকার কথা ছিল অফিসকক্ষে, কম্পিউটার রুমে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে, সেই বয়সেই যুবকের চলতে হয় বিষণ্নতায় ফাইল হাতে। কী যে যন্ত্রণাময় জীবন!

একটু বলে রাখা ভালো, আমি লন্ডন ও ইউরোপের দেশগুলোতে দেখেছি প্রায় ৯৮ শতাংশ ছেলেমেয়ে তাদের নিজের কাজ নিজেই করে থাকে। তারা নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলে এবং তাদের পরিবার থেকে আত্মনির্ভরশীল ও আত্মোন্নয়নের শিক্ষা দেওয়া হয়। একইভাবে আমাদের বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে লেখাপড়া ও চাকরি করার জন্য আসে, তারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

লজ্জা, কারণ আমাদের সমাজ ও আমাদের চিন্তা। আমাদের যুবকদের সমস্যা হলো আত্মবিশ্বাসের অভাব, সমাজের মানুষের সুদৃষ্টির অভাব এবং নতুনকে সুস্বাগতভাবে গ্রহণ করার অভাব। কোনো কাজে ব্যর্থ হওয়া মানেই জীবনের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলা নয়। আমি আব্রাহাম লিংকনের উদাহরণ দেব না, আমি আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা য্যাক মার কথা বলতে চাই না। বাস্তব উদাহরণ হলো, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অল্প বয়সে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে এমনকি সব হারিয়ে আত্মবিশ্বাস ও শক্তি নিয়ে আজ দেশের রাষ্ট্রনায়ক।

যে দেশের রাষ্ট্রনায়ক আত্মশক্তি নিয়ে দেশ চালাতে পারে, খেলার মাঠে ফোন দিয়ে খেলোয়াড়কে আত্মবিশ্বাসের জন্য সাহস দিতে পারে, সে দেশের ৪.৪ মিলিয়ন যুবক আত্মশক্তির অভাবে বেকার থাকবে, তা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। চাকরি জ্ঞানকে শুধু এক দিকে নিয়ে যায়, যেখানে মেধার বিকাশ ও নিজের শক্তি বিকাশের সম্ভাবনা গলা টিপে মেরে ফেলে। বিভিন্ন কর্মের মধ্য দিয়ে নিজের শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে এবং নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে আত্মশক্তিতে। বিশ্বের কাছে তোমাকে প্রমাণ করতেই হবে তুমি সবচাইতে বড়ো শক্তিশালী, তোমার সবই আছে, শুধু দরকার তোমার মনোবল ও আত্মশক্তি। আমি এক নতুন স্বপ্ন বাংলাদেশের তরুণদের চোখে দেখতে পাই, আমাদের দেশের তরুণদের শক্তি আছে এবং কাজ করার মনোভাব আছে, শুধু দরকার উত্সাহ ও আত্মশক্তি।

যদি ৪.৪ মিলিয়ন বেকার আত্মবিশ্বাস ও আত্মশক্তি নিয়ে কাজ করে থাকে, লজ্জাকে পেছনে ফেলে যে কোনো ধরনের কর্মে নিজেকে যদি নিয়োজিত রাখে, তাহলে আমাদের দেশ পৌঁছবে উন্নয়নের শিখরে। তাকিয়ে দেখবে আমাদের উন্নয়নকে সারা বিশ্ব। আমাদের তরুণ ও অন্যদের অন্য দেশে গিয়ে কাজ করতে হবে না। অন্য দেশের লোক আমাদের দেশে আসবে কাজ ও লেখাপড়া করতে। পরিবর্তন শুধু দেখতে চাই যুবক তোমার হাতে, তোমার মুখেই দেখব হাসি সকাল-দুপুর-সাজে, আত্মশক্তি গড়ে তোলো সব কাজে।

মো. হুসাইন আলম  পিএইচডি শিক্ষার্থী ও টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারক্লো, পোল্যান্ড।

সূত্র: ইত্তেফাক

Sharing is caring!

Leave a Comment