করোনার পর সবচেয়ে বড় বিপদ কোনটি?

করোনার পর সবচেয়ে বড় বিপদ কোনটি?

  • আবু সাঈদ

করোনা মহামারি যে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে আমাদেরকে, সেই বিপদ একদিন না একদিন কেটে যাবে নিশ্চয়। কিন্তু তারপর আমরা নিশ্চয় আরও অনেক বিপদের মুখোমুখি হব। করোনার প্রভাব আমাদেরকে নানাভাবে বিপদগ্রস্থ করবে, তাতে সন্দেহ নেই।  তবে সবচেয়ে বড় বিপদ কোনটি, সেটি এখন থেকেই ভেবে রাখা উচিত এবং তদনুসারে প্রস্তুতিও গ্রহণ করা উচিত।

করোনা-পরবর্তী পৃথিবীতে নানা বিপদ ধেয়ে আসছে—এমন জানা ও অজানা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমরা দিন রাত অতিবাহিত করছি।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতগুলো সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন পার করছি তার মধ্যে খাদ্য সংকট হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় সমস্যা।  আমরা যদি এখন ই সচেতন না হই তাহলে এই সংকট আমাদের জন্য করোনার চেয়েও ভয়াবহ উঠবে।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার অনেক দেশের চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ আরও দৈনন্দিন পণ্যের উপর আমরা এবং আরো অনেক দেশ নির্ভরশীল। খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতভাবে ব্যাহত হবে এই মৌসুমে।  গত বছর পেঁয়াজের দামের ভয়াবহতার গল্প আশা করি আমাদের মনে আছে। শুধু মাত্র পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ ছিল কিছু দিন এবং আমরা এই সমস্যার মোকাবেলা করতে পারিনি তখন এবং এখন পর্যন্ত।

গরুর মাংসের দামের কথা নতুন করে বলার দরকার নেই, শুধু একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, ভারত থেকে আমাদনি সাতদিন বন্ধ থাকলে ১০০ টাকা বেশি কেজিতে বেশি গুণতে হয় । এই দাম বাড়ার জন্য যতটাটা আমদানি দায়ী তারচেয়ে বেশি দায়ী দেশের সকল ব্যবসায়ী।  দেশে এখন ধান কাটার মৌসুম আসছে, এই ধান সফলভাবে যদি কৃষক ঘরে তুলতে না পারে তাহলে চালের একটা সংকট হবেই হবে। সঙ্গে থাকবে দেশ প্রেমিক লুটেরাদের মূল্যবৃদ্ধির সাহসিক প্রবণতা।

আবু সাঈদ। ছবি: ফেসবুক

যেটুকু খাদ্য মজুদ আছে সেটা দিয়ে খুব বেশি দিন চালিয়ে নেয়া যাবে না, এটুকু বুঝতে খুব জ্ঞানী হতে হয় না।  আমাদের এশিয়ার কোনো দেশেই হিমায়িত খাবারের তেমন মজুদ নেই।  আমদের আঠারো কোটির মতো মানুষের খাবারের বেশির ভাগই আমদানী-নির্ভর।

এশিয়ার জনসংখ্যা বিবেচনায় নিলে নি:সন্দেহে বলা যায় যে, একটা খাদ্য সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি আমরা।  কারণ কিছু দিন পর সবাই ‘ইয়া নাফছি ইয়া নাফছি’ অবস্থার মধ্যে পড়ে যাবে, রপ্তানি করতে কোনো দেশই রাজি হবে না কারণ সবাই চাইবে নিজেদের মানুষদের বাঁচাতে।  ভারত মুখ ফিরিয়ে নিবে (তাঁদের মানুষ ১৩৫ কোটি), পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, বাকি দেশগুলোও একই কাজ করবে।  চীন লেজ গুটিয়ে নিয়ে বসে থাকবে এবং উচ্চমূল্য হাঁকাবে নিজেদের শক্তি প্রমাণের জন্য।  কম দামে চীনের পণ্য কেনার যে অভ্যাস সারা দুনিয়ার হয়েছে সেটা আমাদের আরও দুরাবস্থার দিকে ঠেলে দিবে।

তাই সময় থাকতে খাদ্য উৎপাদনের দিকে নজর দেয়া দরকার। মৌসুমের আবাদি ফসল ঘরে তুলতে হবে, সেটা যেন সুন্দরবভাবে হয় সেটা সকলের খেয়াল রাখতে হবে। খাবার সংরক্ষণ উৎপাদনের দিকে গভীর মনোযোগ দিতে হবে।  নতুবা দুর্ভিক্ষ আসন্ন।

আবু সাঈদ : আলবোর্গ, ডেনমার্ক থেকে

Sharing is caring!

Leave a Comment