অনিকের অনন্য উদ্যোগ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
রূপগঞ্জ এবং রাজধানী ঢাকায় গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমধর্মী এক স্কুল। স্কুলের ক্ষুদে সব শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ শিখছে এবং করছে বেশ দক্ষতার সঙ্গে। এদের সবার বয়সই ৭ থেতে ১৬ বছরের বেশি নয়। ছোট্ট বয়স থেকে যেন এক একজন হয়ে উঠছে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি ছুটির দিনে ইঞ্জিনিয়ারিং শিখছে এ সকল শিশুরা।
আর এ উদ্যোগটি নিয়েছেন রূপগঞ্জের এক তরুণ। তিনি হলেন নিলয় হোসেন অনিক। এই তরুণ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা শেষ করার আগেই এ কাজে হাত দেন। রূপগঞ্জের ভূলতা এলাকার নিলয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফর চিল্ডেন এই শ্লোগানে ‘দ্য টেক স্কুল’এর উদ্যোগ সব জায়গায় প্রশংসিত হচ্ছে। আর নিলয়ের এ অসাধারণ কাজটি ভালো একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সবাই।
এখন প্রশ্ন হলো ক্ষুদে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর আইডিয়াটা নিলয়ের মাথায় এলো কিভাবে?
নিলয় জানান, ২০১৩ সালের কথা। কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ুয়া বন্ধুদের সহায়তায় কিছু পথশিশুদের নিয়েই পথচলা শুরু হয়। এসব শিশুদের চিন্তা-শক্তিকে বাড়িয়ে তোলা এবং হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করাই ছিল প্রধান লক্ষ্য।
নিলয় বলেন, আমার মনে পড়ে একটা শিশুর ইচ্ছা ছিল সে রকেট বানাবে। তো তাকে রকেট সায়েন্সের ওপর বিভিন্ন ডকুমেন্টারি দেখানো, বোতল দিয়ে রকেটের বিভিন্ন মডেল বানানো, এর পেছনে ফিজিক্সের বিভিন্ন আইনের ব্যাপারে ধারণা দেয়া, এসবের মাধ্যমে তাকে আরো আগ্রহী করে তোলাটাই থাকত আমার চেষ্টার মধ্যে। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে একটা সময় প্রজেক্টটা বন্ধ করে দিতে হয়। আর এই ব্যর্থতাই আমার মাঝে একজন উদ্যোক্তার জন্ম দেয়। আমি অনুভব করি আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাকে একটা সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কাঠামো নিয়ে ভাবতে হবে।
তারপর নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আবারো আমি কাজ শুরু করি। আমার নতুন লক্ষ্য এবার মধ্যবিত্ত পরিবারের বাচ্চারা। নিকেতনে একটা বাসা সাবলেট নিয়ে শুরু করি নতুন আরেক অধ্যায়। কিছু শিক্ষার্থীও পেয়ে যাই। ওদের নিয়ে পরিকল্পনা ছিল পদার্থ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, সাইকোলজি, আর্কিটেকচার, ফিলোসফি এবং রোবটিকস বিষয়গুলো থেকে তারা ইচ্ছামতো বিষয় নিয়ে ইঞ্জিরিয়ারিং পথে এগোবে এবং শিখবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা এবং পরিচিত শুভাকাঙ্খীরা সাহায্য করতে আগ্রহী হয়ে গেল।
এরপরও সমস্যার শেষ নেই। অভিভাবকদের কাছে এ আইডিয়াটা গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কারণে পরিকল্পনাও বেশিদিন টিকল না। তারপর আর বেশি চিন্তা না করে ফোকাস করলাম শুধুমাত্র রোবোটিক্সের ওপর। সঙ্গে একজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে শুরু করলাম ওনেস স্কুল অব রোবোটিক্স। এবারো একই লক্ষ্য, এটাতেও অভিভাবকরা খুব একটা আস্থা দেখালেন না।
কিন্তু তারপরও পেয়ে গেলাম কিছু ব্যতিক্রমধর্মী অভিভাবক এবং খুবই আগ্রহী শিক্ষার্থী। জাওয়াদ তাদের মধ্যে একজন। সে এখন আমার স্কুলে ছাত্র হিসেবে নয়, আছে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। তার বয়স ১২। ধীরে ধীরে পেয়ে গেলাম সাফওয়ান, টোনার, সাইমানসহ আরো অনেককে। তাদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিযোগিতা এবং আয়োজনে সক্রিয় অংশগ্রহণে অসাধারণ কিছু সৃষ্টি ও আবিষ্কার আস্তে আস্তে সবাইকে এ ব্যাপারে ভাবাতে শুরু করে। তারপর আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এবং এ সাফল্যে জন্ম দেয় আরেক নতুন অধ্যায়ের ‘দ্য টেক স্কুল’। শুরুটা রাজধানী ঢাকার গুলশান নিকেতনে হলেও বর্তমানে নিজ এলাকা রূপগঞ্জে গড়ে উঠেছে দ্য টেক স্কুলের শাখা।
স্কুলটিতে মাত্র ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সের বাচ্চাদের ইঞ্জিনিয়ারিং তথা প্রোগ্রামিং ইলেট্রনিক্স, রোবোটিক্স এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানো ছাড়াও টেক স্কুল রিসার্চ এবং ডেভেলভমেন্ট বা দ্য টেক ফার্মে বিভিন্ন রিয়েল লাইফ প্রোজেক্ট ডেভেলপ করার কাজ শেখানো হয়। যদিও প্রচলিত স্কুলিং সিস্টেমের ঠিক উল্টোটা বেশ ভালোভাবেই চর্চা হয়। দ্য টেক স্কুলে যেটা করা হয় সেটা বাচ্চাদের ইচ্ছাকে প্রচণ্ড রকমভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, ডেভেলপার, স্টাফ কাউকেই এমন কিছু শিখতে বা করতে হয় না যেটার ব্যাপারে তার কোনো ইচ্ছা বা আগ্রহ নেই। এটাই যে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করে তোলে।
নিলয় বলেন, একজন শিশু যে বিষয়ে তার ক্যারিয়ার গড়তে চায় তার জন্য একমাত্র এবং পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে দ্য টেক স্কুল। আর এটাকে সারা বাংলাদেশে এবং ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া নিলয়ের স্বপ্ন বা ইচ্ছা। নিলয় ও তার সহযাত্রীরা বাংলাদেশের প্রত্যকটা শিশুকে টেকনোলজি ডেভেলপার হিসেবে দেখতে চায়।
দ্য টেক স্কুলের কর্ণধার নিলয় হোসেন আরো বলেন, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খুব শিগগিরই টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবশ করা। যার মাধ্যমে টেকনোলজি সবার হাতে হাতে নিয়ে আসতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।