প্রকৌশলী থেকে অনলাইন ফেরিওয়ালা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
নিজেকে বিক্রয়কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা এক তরুন উদ্যোক্তা তিনি। নাম খোবাইব চৌধুরী। সত্যিকার অর্থে ক্যারিয়ারের শুরুতে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। পরিচিত পথে না হেঁটে ভিন্নধর্মী এক পণ্য অনলাইনে ফেরি করার কাজে নেমেছেন।
দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ থেকে পাশ করা এ প্রকৌশলী এগিয়ে গেছেন নিজের কাজে। শত শত ই-কমার্সের ভীড়েও পথ হারাননি। নিজের যোগ্যতা ও পরিশ্রমে স্বল্প সময়ে বেশ সাড়া পেয়েছেন। বিকল্প কিছু করেও সফল হওয়ার এক উদাহরণ হতে পারে স্টাইলাইন কালেকশন।
প্রযুক্তি ব্যবসার ধারণাকে বদলে দিতে পারে- এমন বিশ্বাস থেকেই ই-কমার্স ও এফ-কমার্সে মেয়েদের মোডেস্ট লাইফস্টাইল পণ্য হিজাব ও সংশ্লিষ্ট সামগ্রী বিক্রিতেও পিছপা হননি।
যেভাবে আগ্রহী হলেন
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ২০১১ সালে স্নাতক শেষে অন্য সবার মতোই যোগ দিয়েছিলেন চাকরিতে। তবে নিজের মতো কাজ করতে চেয়েছিলেন বলে সেখানে থিতু হতে পারেননি।
প্রথমে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন। এক সময় দেখেন তৈরি করেছেন ৩০টির অধিক অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। নিজের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টাও করেছিলেন কিছু দিন। তবে সেটি আলোর মুখ না দেখায় অনলাইনে ভিন্নধর্মী পণ্য ফেরি করার উদ্যোগ স্টাইলাইন কালেকশন নিয়ে পথে নামেন। ২০১৫ সালের এপ্রিলে শুরুর পর ধীর ধীরে একটি জায়গা করে নিয়েছেন।
কাজে নামার আগে দেশে অনলাইন কেনাবেচার বাজার গবেষণার কাজটি ভালোভাবেই করেছিলেন খোবাইব চৌধুরী। তিনি দেখতে পান, কম মূল্যে বেশিরভাগই ‘নিশ মার্কেট’ থেকে লাইফস্টাইল পণ্য বেশি খোঁজেন। সে চাহিদা থেকেই ব্যতিক্রমী এ পণ্যের অনলাইন বিপণনের পসরা সাজানোর পরিকল্পনা করেন।
এগিয়ে যাওয়া
ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জিং এ উদ্যোগ হাতে নেওয়ার আগে নিজেকে পরিপক্ক করতে তরুণ এ প্রকৌশলী ভর্তি হয়েছিলেন ফাউন্ডার ইন্সটিটিউটে। সেখানে প্রশিক্ষণকালে একটি উদ্যোগকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিতে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়ে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি নেটওয়ার্ক তৈরি ও মেন্টরশিপসহ বিভিন্ন কাজ কীভাবে করতে হয় তা শিখেছেন হাতেকলমে।
বর্তমান অবস্থা
কাজের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে স্টাইলাইনের কর্মীও বাড়ছে বলে জানান খোবাইব। এখন কাজ করছে ১৪ জনের একটি দল। অপারেশন, সেলস, কাস্টমার সার্ভিস ও ইনভেন্টরি কাজের দেখভাল করেন তারা।
তবে গ্রাহক যাতে ঝুটঝামেলা ছাড়া কেনাকাটা করতে পারেন, সে জন্য অল্পদিনের মধ্যে পুরো ব্যবস্তাকে অটোমেশনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে স্টাইলাইন।
যেসব পণ্য পাওয়া যায়
মডেস্ট লাইফ স্টাইলের সব ধরণের পণ্য নিয়ে নিজেদের সাজাতে চায় স্টাইলাইন কালেকশন। হিজাবের মতো ভিন্ন ধরনের পণ্য দিয়ে তাদের উদ্যোগ শুরু হলেও এখন হিজাব অ্যাক্সোসরিজ যেমন- ইনার ক্যাপ, হিজাব পিন ও হ্যাঙ্গার পাওয়া যায়।
গ্রাহকের চাহিদা ও পছন্দের কথা মাথায় রেখে খুব শিগগির আবায়া, শ্রাগসহ আরও নতুন পণ্য যোগ করতে চান তারা।
প্রচারণা
এখন পর্যন্ত ফেইসবুককেন্দ্রিক প্রচারণার ওপর নির্ভর করেই চলছে তাদের বাণিজ্যের প্রসার। তবে বেশিরভাগ অর্ডার আসে ওয়েবসাইট থেকে। অনলাইন প্রচারণার পাশাপাশি নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে বেশ কিছু মেলাতেও অংশ নিয়েছে স্টাইলাইন।
প্রতিবন্ধকতা
ই-কমার্স ব্যবসায় বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে স্টাইলাইন। খোবাইব বলেন, পণ্য সরবরাহসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম ও ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। অনলাইন কেনাকাটায় সবাই দ্রুত ও অক্ষত পণ্য পেতে চায়। তবে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সরবরাহ করতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। কেননা কুরিয়ার সার্ভিসগুলো ঢাকার মধ্যেও ২৪ ঘণ্টায় পণ্য পৌঁছে দিতে পারে না।
তবে নিজেদের উদ্যোগে ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯০ শতাংশ পণ্য ডেলিভারি করছে স্টাইলাইন।
এছাড়া পেমেন্টের বেলাতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের। মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে এসব সমস্যা সংশ্লিষ্টদের বলেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিকার পাননি তারা।