বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান গড়তে চান মাছুমুল
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে ডোমেইন ও হোস্টিং সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান। তরুণ উদ্যোক্তা মাছুমুল হকের এই প্রতিষ্ঠানের নাম হোস্টপেয়ার এলএলসি। ডোমেইন, ওয়েব হোস্টিং, ভার্চুয়াল সার্ভার, ডেডিকেটেড সার্ভার ও ক্লাস্টার সার্ভার সলিউশনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট তৈরির সেবাও দিচ্ছে হোস্টপেয়ার। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইইই) স্নাতক ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন মাছুমুল হক। স্নাতক শেষ করে আইটি এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
যেভাবে শুরু হল
একবার ঢাকার শাহবাগে বিদেশ থেকে একটি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি এসেছিল। গাড়িতেই দুটি পরিবারের বাস। তারা অনেক বছর আগে তাদের দেশ ছেড়ে এসেছে। গাড়িটাই তাদের বাড়ি। দুই পরিবারের সঙ্গে তাদের বাচ্চারাও থাকে। বিষয়টি ভাবায় মাছুমুলকে। মনে প্রশ্ন জাগে- এই যে তারা বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদের আয়ের উৎস কী? পরে জানতে পারেন, গাড়ির দুই পরিবারে রয়েছেন দু’জনই প্রোগ্রামার। অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করেন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই ধারণা থেকেই কিছু করার ইচ্ছা জাগে মাছুমুলের মনে। প্রবাসী এই বড় ভাইয়ের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে নিঝুম দ্বীপ নিয়ে ২০০৭ সালে তৈরি করেন একটি ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট। এরপর পরিচিত কারো ডোমেইন ও হোস্টিং প্রয়োজন হলে ওই প্রবাসী ভাইয়ের মাধ্যমে সেবা দিতে শুরু করেন তিনি।
এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা
ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে বাংলাদেশ থেকে সহজ পেমেন্ট সিস্টেম না থাকায় শুরুতে নানারকম প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় হোস্টপেয়ারকে। এক্ষেত্রে প্রবাসী ভাই-বন্ধুদের সহযোগিতায় নিজেই তৈরি করেন অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম। যার মাধ্যমে অনলাইন থেকেই গ্রাহকরা ডোমেইন ও হোস্টিং অর্ডার করতে পারেন। একসময় গ্রাহকের কাছে থেকে বিল নেয়া ও দেয়াই সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল বলে মনে করেন মাছুমুল হক। তিনি বলেন, গ্রাহকরা ব্যাংকে গিয়ে পেমেন্ট করে ডিপোজিট করে ই-মেইলের মাধ্যমে জানাত। তারপর তারা সেবা পেত।
আর আন্তর্জাতিক পেমেন্টের জন্য আমাদের ফ্রিল্যান্সার কারো সাহায্য নিতে হতো। এছাড়া দ্রুত গতির ইন্টারনেট সুবিধা না পাওয়ায় মাঝে মাধ্যেই তার প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
চলছে যেমন হোস্টপেয়ার
দ্রুত গতির ইন্টারনেট ও অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম সুবিধার কারণে হোস্টপেয়ার এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। দেশী এবং বিদেশী কর্মীদের মাধ্যমে নিশ্চিত করছে ২৪ ঘণ্টা কাস্টমার সাপোর্ট। একসময় শুধু পরিচিতদের মাধ্যমে গ্রাহক পেলেও সেবার মান ও বিপণন ব্যবস্থার কারণে হোস্টপেয়ারের গ্রাহক বেড়েই চলছে। ২০১২ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে কাজ করছেন ১০ জন তরুণ-তরুণী। ২০১৭ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৫০ করার লক্ষ্য মাছুমুল হকের।
সফলতার হাতছানি
হোস্টপেয়ারকে (www.hostpair.com) একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড হিসেবে দাবি করে মাছুমুল হক বলেন, বাসার একটি রুম থেকে শুরু হয়ে এখন মহাখালী ডিওএইচএসে আমাদের নিজস্ব অফিস রয়েছে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে আমাদের তিন হাজারেরও বেশি গ্রাহক রয়েছেন। CloudLinux, cPanel, Cloudflare, Attracta Ges Softaculous-এর মতো বিশ্বের নামিদামি কোম্পানির সঙ্গে রয়েছে আমাদের ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ। তার স্বপ্ন- হোস্টপেয়ারকে একদিন বিশ্বের নামকরা হোস্টিং প্রোভাইডার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। যার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন হাজারো তরুণ-তরুণী। মাছুমুল বিশ্বাস করেন, কোনো কাজে একাগ্রতা, সততা ও নিষ্ঠা থাকলে সফলতা আসবেই। এই পথ ধরেই তারা এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন।