উদ্যোক্তা আরাফাতের এগিয়ে চলা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গত এক দশকে বাংলাদেশের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। আর এ উন্নয়ন যে শুধু রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক, তা নয় মোটেই। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। আর নিজেরাই পথ দেখিয়েছেন আরো অনেক স্বপ্নবাজের। এ রকমই একজন স্বপ্নবাজ তরুণের নাম মুহাম্মদ আরাফাত রহমান।
শুরুটা করেছিলেন নিজের ইচ্ছায়, পথটাও বের করে নিতে হয়েছে নিজেকে। অনেকের সহযোগিতা পেয়েছেন কাজের ক্ষেত্রে, আবার কখনো পাননি; কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি কখনো। ২০১৩ সালে আরাফাত যখন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু করেন, তখন তাঁর ইন্টারনেট স্পিড ছিল সর্বোচ্চ ৩০ কেবিপিএস।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা আরাফাত নিজের আগ্রহেই শেখেন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ। শুরুতে আরাফাতের প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘ময়মনসিংহসোর্স’, তবে পরে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘হোস্টঅ্যারোমা’, যা বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ডোমেইন-হোস্টিং প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করছে। হোস্টঅ্যারোমাতে পাঁচ শতাধিক গ্রাহক রয়েছে তাদের।
আরাফাত বলেন, ‘আমার প্রধান প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সফটএভার। এটি একটি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। সফটএভারের একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে হোস্টঅ্যারোমা। মফস্বল অঞ্চলে স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের সফটওয়্যার ও ওয়েবসেবা দিচ্ছে সফটএভার।’
আরাফাতের সঙ্গে কাজ করছেন তাঁরই মতো স্বপ্নবাজ কয়েকজন তরুণ। সফটএভারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে আছেন মো. রিয়াদ হাসান ও জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে আছেন মেহেদী হাসান আবদুল্লাহসহ প্রায় ১০ জন কর্মী।
২০১৩ সালে ময়মনসিংহ সদরে এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে প্রথমে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ শেখেন আরাফাত। সেটা ছিল তাঁর শুরু, এর পর নিজের আগ্রহ নিয়ে কাজ করতে থাকেন। কাজ করতে করতেই শেখা ইউটিউব দেখে। বাংলা ফ্রি টিউটোরিয়ালগুলোর মাধ্যমেও কাজ শিখেছেন। সমস্যায় পড়েছেন নিজেই, সেটা সমাধানের চেষ্টা করেছেন।
২০১৪ সালে ‘ময়মনসিংহসোর্স’ নাম দিয়ে ভালুকার বিরুনিয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রাম থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছিলেন আরাফাত রহমান। এখন ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে করপোরেট অফিস থেকে তাঁদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
আরাফাত বলেন, ‘হোস্টঅ্যারোমার মাধ্যমে আমরা ডোমেইন ও হোস্টিং সেবা দিয়ে যাচ্ছি আর সফটএভারের মাধ্যমে ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ও ডেস্কটপ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা দিচ্ছি।’
যেহেতু নিজে নিজেই কাজ শিখেছেন, তাই আরাফাত মনে করেন, পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি। নিজের কাজের প্রতি যেমন ভালোবাসা থাকতে হবে, তেমনি নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার আগ্রহও থাকতে হবে। কারণ, প্রযুক্তির জগতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে।
আরাফাত বলেন, ‘মেধা, ধৈর্য ও সততার সঙ্গে নিজের কাজটি করতে হবে। আর আমি যেহেতু ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করি, তাই সৃজনশীলতার বিষয়টিও কাজের মধ্যে থাকতে হয়। এ কারণে নিজের চারপাশ থেকে শেখার ও পর্যবেক্ষণের বিষয়টিও জড়িত। ওয়েব ডেভেলপমেন্টে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই পরিশ্রমী হতে হবে।’
নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে আরাফাতের স্বপ্ন অনেক, সে স্বপ্ন পূরণের পথেই হাঁটছেন তিনি, যতই এগোচ্ছেন সামনে আরো নতুন পথ ও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আরাফাত বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা রয়েছে সফটএভারের কাজের পরিধি আরো বিস্তৃত করা। দেশের এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হতে চাই আমরা।’