রুবেল হামজার ‘হামজা গেমস’
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
অনেকেই শৈশবে একটা খেলা খেলতেন। বিভিন্ন কাঠি একটার উপর আরেকটা রেখে যেকোন একটা সরাতে বলা হতো, সব কটি না ফেলে নির্দিষ্ট কাঠিটা বের করতে পারলেই খেলায় জেতা যেত। এই আদলে মুঠোফোনের জন্য গেম তৈরি করে মো. রুবেল হামজার প্রতিষ্ঠান হামজা গেমস। নাম দেয় পিক অল স্টিক। গেমটি অ্যাপেলের আইওএস অ্যাপ স্টোরের টপচার্টে রয়েছে। এমন বেশ কিছু সফল গেম আছে প্রতিষ্ঠানটির ঝুলিতে।
গোটা পৃথিবীতে গেমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তার সঙ্গে বাড়ছে গেম তৈরির কারিগর বা ডেভেলপার। দেশগুলোতে উন্নত মানের ডেভেলপার থাকলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। সফটওয়্যার প্রকৌশলী মো. রুবেল হামজা তেমনই একটি উদাহরণ। যার তৈরি একটি গেম স্মার্টফোনে ব্যবহার হয়েছে ২০ লাখ বারেরও বেশি।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের আগানগরে আবদুল কুদ্দুস ও হেনা বেগমের প্রথম সন্তান রুবেল। চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এইচএসসি পাসের পর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলেনি তার। এরপর ভর্তি হন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমিতে। তথ্য-প্রযুক্তিতে নিজের আগ্রহ খুঁজে পান। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতা পান। নিজের ইচ্ছাটা তো ছিলই। তাই আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
অনলাইনে অভিষেক
২০০৮ সালে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ইন্টানেটে আউটসোর্সিং কাজে অভিষেক ঘটে রুবেলের। কিছুদিনের মধ্যেই ঘরে বসে ওডেস্ক এবং ইল্যান্স থেকে মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার আয় করতে শুরু করেন রুবেল। এরপর বাবার ইচ্ছাতেই যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। যুক্তরাজ্যেও ইউনিভার্সিটি অব গ্রিনিচে প্রোগ্রামিং শেখার জন্য ভর্তি হন। পড়ালেখা ও নিজের খরচ যোগানোর জন্য আবার শুরু করে ফ্রিল্যান্সিং। সে সময় ইল্যান্সের মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার প্রোগ্রামারের মধ্যে রুবেলের অবস্থান দাঁড়ায় ৫০৮ নম্বরে। পরে তার সাফল্য দেখে গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওডিসির যুক্তরাজ্য শাখার তাকে অফিস প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
হামজা গেমসের যাত্রা
২০১২ সালে দেশে ফিরে আসেন রুবেল। শুরুতে অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য গেম তৈরী করলেও বিশ্বব্যাপী ভিডিও গেমের চাহিদা এবং এর লাভজনক দিক বিবেচনা করে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে চার জন ডেভেলপারকে সঙ্গে নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘হামজা গেমস’ চালু করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চারজন ডেভেলপার কাজ করেন। তাদেও সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন আরও অনেকে।
হামজা গেমসের অর্জন
স্মার্টফোনের জন্য এখন পর্যন্ত ১২০টির বেশি গেম তৈরি করেছে হামজা গেমস। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো অ্যামাজিং অ্যান্ট স্ম্যাশার, যা ২০ লাখেরও বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে। এছাড়া হাংরি ফিস, ব্রেক মি নট, পিক অল স্টিক বিভিন্ন দেশের অ্যাপ স্টোরে শীর্ষ জনপ্রিয় গেমগুলোর তালিকায় স্থান পেয়েছে। হামজা গেমসের তৈরি বেশির ভাগ গেমই প্রিমিয়াম। মানে কিনে খেলতে হয়। মূলত অ্যাপেলের আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বেশি গেম তৈরি হয়। বাংলাদেশ থেকে গুগল প্লেস্টোরে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি না থাকায় বিনা মূল্যে প্লেস্টোরে গেম দিতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাই এখন পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েডের জন্য এ ধরণের বেশ কিছু গেম প্লেস্টেরে প্রকাশ করলেও বিনা মূল্যে গেম ছাড়তে নারাজ রুবেল হামজা। তিনি অবশ্য বাংলাদেশ থেকে গুগল মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতির অপেক্ষায় আছেন। এ বছরের শেষ নাগাদ আইওএস অপারেটিং সিস্টেম প্রায় ২০টি নতুন গেম অ্যাপ স্টোরে আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রুবেলের তৈরি গেমগুলো অ্যামাজন প্ল্যাটফর্মেও পাওয়া যায়।
করতে চান অনেক কিছু
নিজের কিছু স্বপ্নের কথা জানালেন রুবেল। বলেলেন,‘কার্টুন স্টুডিও করব একটা। মিনা কার্টুনের মতো শিক্ষানীয় কার্টুন বানাব। আবার ওই কার্টুনগুলোর সঙ্গে মিল রেখে গেম বানাব।’এ দেশের প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশাবাদী রুবেল হামজা। তিনি মনে করেন, দেশে প্রোগ্রমিং বা প্রযুক্তি শিক্ষা খাতে আরোও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তরুণদেও নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে রুবেলের। তিনি বলেন, ‘কি আছে আর কি নেই, তা নিয়ে অজুহাত দেখিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, কোন কিছু করার ইচ্ছাটাই যথেষ্ট। পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করাটাই আসল।’