চট্টগ্রামে তরুণদের চমকপ্রদ উদ্ভাবন
- উদ্যেক্তা ডেস্ক
কোনো জঙ্গি আস্তানার ভেতরে কী কী অস্ত্র মজুদ আছে, মাটির নিচে কোনো গ্রেনেড বা বিস্ফোরক রাখা হয়েছে কি-না, জঙ্গিদের অবস্থান এবং হামলার প্রস্তুতি কি-জঙ্গি হামলা ঠেকাতে এলএস ২৪৭ রোবট এমন নানা তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে!
কোনো বিস্ফোরক ধরা পড়লে মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে জানাবে এ রোবট। বোমা নিষ্ক্রিয়ও করতে পারে এ রোবট। পুরো কাজটি নিয়ন্ত্রিত হবে রিমোটের মাধ্যমে। তাছাড়া রাস্তায় পার্ক করে রাখা গাড়িকে অন্যত্র সড়িয়ে সড়ককে আবার যানজটমুক্ত করবে পার্কিং সিস্টেম। এমন উদ্ভাবনী নানা সরঞ্জাম তৈরি করেছেন চট্টগ্রামের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিমুখী তরুণ শিক্ষার্থীরা। বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন প্রযুক্তি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে আয়োজিত বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী ও জেলা ব্র্যান্ডিং মেলায় এমন নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন তুলে ধরেন ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন সমকালকে বলেন, ‘বিভাগ থেকে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন তুলে ধরেছেন। এতে অজানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।’
জঙ্গি হামলা ঠেকাবে রোবট
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় স্মরণকালের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা সারাদেশের মানুষের মতোই নাড়া দিয়েছিল চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে। দেশে এমন জঙ্গি হামলার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় এবং তা ঠেকানোর জন্য প্রায় চার মাস তারা চেষ্টা করে তৈরি করেন এলএস ২৪৭ রোবট। এমন অসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করা তিন শিক্ষার্থী হলেন কৌশিক পাটোয়ারী, সুজন মজুমদার ও ফয়সাল উদ্দিন। তারা জানান, রোবটটিতে জিএসএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বিস্ফোরক ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দ্রুত জানা সম্ভব হবে। রোবটে রাখা হয়েছে উন্নতমানের আইপি ও সিসি ক্যামেরা। যা দিয়ে তোলা যাবে ছবিও। এর সামনের অংশে রাখা হয়েছে টিয়ার শেল স্ট্যান্ড। রোবটে মেটাল ডিটেক্টর, জিএসএম মডিউল, গিয়ার মোটর, মাইক্রো কন্ট্রোলার রাখা হয়েছে। রোবটটিতে একটি এনড্রয়েড মোবাইল সেট রাখা হয়েছে। এ মোবাইল ফোনটির সঙ্গে বাইরে থাকা অপর আরেকটি মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপের সঙ্গে সংযোগ থাকবে। ভেতরের পুরো চিত্রটি এর মাধ্যমে বাইরে থেকে দেখা যাবে। পুরো সিস্টেমটি তৈরি করতে এক থেকে দুই লাখ টাকা খরচ পড়বে।
রাস্তার যানজট কমাবে পার্কিং সিস্টেম
যানজটের দুর্ভোগ কমাতে নতুন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির ট্রিপল-ই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। যার নাম রাখা হয়েছে অটোম্যাটিক মাল্টিস্টোরাইড কার পার্কিং সিস্টেম। বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ সমকালকে বলেন, ‘সড়কে যানজটের প্রধান কারণ গাড়ি পার্কিং। এ জন্য আমরা একটি নতুন আবিষ্কার করেছি। এর মাধ্যমে রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা গাড়িগুলো সহজে একটি ক্রেনের মাধ্যমে সেখান থেকে তুলে নিয়ে নির্ধারিত স্থানে রাখা যাবে। এতে সড়ক যেমন গাড়িমুক্ত হবে; ঠিক তেমনি যানজটেরও সৃষ্টি হবে না।’
অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চললেই খবর যাবে পুলিশের কাছে
সময় বাঁচাতে বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। এতে ঘটনাস্থলেই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। এমন ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও পাওয়া যায় না ঘাতক চালক কিংবা গাড়িকে। তবে এখন বেপরোয়াভাবে বেশি গতিতে গাড়ি চালালেই তা তাৎক্ষণিক সে খবর খুদেবার্তার মাধ্যমে চলে যাবে পুলিশের কাছে! এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষার্থী। যন্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাশ ড্রাইভ প্রজেক্ট সিস্টেম’। প্রায় ছয় মাস চেষ্টা করে নতুন এ উদ্ভাবনটি আবিষ্কার করেছেন তিন শিক্ষার্থী ইসমা আজম, প্রসেনজিৎ দাশ ও শুভাগত দত্ত। চট্টগ্রাম নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে শুরু হওয়া বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী ও জেলা ব্র্যান্ডিং মেলায় এ ধরনের নানা উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়েছেন মেলায় অংশ নেওয়া পুরো বিভাগ থেকে বাছাইকৃত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।