সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য লাল-সবুজ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে, বিশেষ করে শিক্ষা নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যেই গড়ে উঠেছে ‘লাল-সবুজ’ নামের সংগঠনটি। যারা খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের অভাবে নানা সমস্যায় পড়ছে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলাই এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।
২০০৯ সালে চাঁদপুর শহরে শুরু হয় লাল-সবুজ ফাউন্ডেশন, দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় এ আর খান বাপ্পী, গোলাম কামরুদ্দীন চৌধুরী ও মনিরুল হাসান জনি—তিন বন্ধু মিলে শুরু করে এই সংগঠনটি। এরপর ২০১২ সালে ঢাকায় ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে চালু হয় তাদের আরেকটি নতুন কার্যক্রম। এখানেও শুরু হয় একই উদ্দেশ্য নিয়ে। বর্তমানে ৬৫ জন সদস্য মিলে প্রতিমাসে অনুদান দিয়ে লাল-সবুজ স্কুলের ৪০ জন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ও খাবারের ব্যবস্থা করে। নার্সারি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় স্কুলটিতে। যেখানে রায়ের বাজার, হাজারীবাগ, ঝিগাতলা, ধানমন্ডি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ানো হয়।
বাপ্পী জানান, ‘প্রতিমাসেই একবার করে সুবিধাবঞ্চিত এসব বাচ্চাদের বাসায় যাই, তাদের আশপাশের পরিস্থিতি দেখতে এবং তাদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সঠিক পথে এবং পড়াশোনায় নিয়মিত রাখার চেষ্টা করি। এছাড়া তাদের সাস্থ্য সচেতন করার জন্য এলাকায় গিয়ে মনিটরিং করি। তারা কে কী করছে সেইসব খবর রাখার চেষ্টা করি। তবে এই কাজের অনুভূতি বোঝানো কঠিন। যখন এসব বাচ্চারা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে সেই অনুভূতি অন্যরকম। দিনশেষে এইটুকুই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহস দেয়। নিজেদের মধ্য থেকে চাঁদা তুলে কিংবা মাঝে মাঝে নানা জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এই সংগঠনের কাজ চলছে।’
‘স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কাজ করছি বলে অনেকেই নেতিবাচক অনেক কথা বলেন। আবার অনেকেই মাঝে মাঝে আমাদের কাজে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে চলা। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা হলো খোলা আকাশের নিচে স্কুল চালানো। খোলা জায়গায় পাঠদানে বেশ কিছু সমস্যা হয়। এজন্য একটি স্কুল ছাদ করার পরিকল্পনা করেছি। ‘মিশন ১০০০’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি, যেখানে ১০০০ জন মানুষ ২০০ টাকার এককালীন একটি অনুদান দিবে এবং যে টাকা দিয়ে তৈরি হবে লাল-সবুজ স্কুলের ছাদ। ২০১৮ সালে আমাদের একটি আইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সেলাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছে আছে লাল-সবুজ স্কুলের পাশাপাশি যেখানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ সহায়তা পাবে এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করার পরিকল্পনা জানান সংগঠনের আরেক সদস্য কামরুদ্দিন। এছাড়াও প্রতিবছর শীতবস্ত্র বিতরণ, রমজানে ইফতার, ঈদে জামাকাপড় দেয় লাল-সবুজ নামের এই সংগঠনটি।’
তারা অনুপ্রেরণা পায় আশেপাশের অনেকের কাছ থেকেই, বন্ধুরাও কমবেশি সহায়তা করে। যে কেউ তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করতে। প্রতিমাসে ন্যূনতম অনুদান প্রদান করে যে কেউ সদস্য হতে পারবে এবং তাদের মধ্যে অবশ্যই সমাজের জন্য ভালো কিছু করার উদ্যম এবং সাহস থাকতে হবে।