পর্যটনের পালে হাওয়া দিচ্ছে অনলাইন ট্রাভেল গ্রুপ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
নিয়ন হাসান দু-একজন বন্ধুর সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। কিন্তু একটু দুর্গম এলাকায় যেতে চাইলেও মানুষ খুঁজে পেতেন না। দলের পাল্লা ভারী না হলে যেসব জায়গায় বেড়ানো যায় না। আর একটু দুঃসাহসিক অভিযানে যাওয়ার জন্য তো মনের ছটফটানি আছেই। তবে নিয়নকে এখন মানুষ খুঁজতে হয় না। নিয়নের সামনে এখন অনেক বিকল্প।
‘গোল এই পৃথিবীতে ঘুরতে ঘুরতে একদিন না একদিন সবার সঙ্গে দেখা হবেই।’ দেশের পথে ঘুরতে গিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের সঙ্গে দেখা হয়েই যায়। এই ভ্রমণের বৃত্তেই তাঁরা থাকতে চান। ‘বৃত্ত ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম’-এর ফেসবুক গ্রুপে নিজেদের সম্পর্কে এভাবেই বর্ণনা দেওয়া। এক বছর আগে অনলাইনভিত্তিক এই ট্রাভেল গ্রুপটি যাত্রা করে।
তিন উদ্যোক্তার একজন মাজহারুল ইসলাম বললেন, ‘একসময় নিজেদের মতোই ঘুরতাম। আশপাশে বন্ধুদের নিয়ে ট্যুর প্ল্যান করেছি। একসময় মনে হয়, দেশটা তো আমার একার নয়। এর সৌন্দর্য উপভোগ করার অধিকার সবার। এ চিন্তা থেকেই এ গ্রুপের জন্ম।’ সদস্যসংখ্যা ২২ হাজার। বৃত্ত এখন পর্যন্ত ৩০টি ভ্রমণের আয়োজন করেছে। মাজহারুল বলেন, ৪০ জনের একটি দল নিয়ে দুদিন আগেই ফিরেছেন বান্দরবানের মারাইংতং পাহাড় থেকে। বেড়ানোর জায়গা নির্বাচন নিয়ে বলেন, আবহাওয়া ও ঋতুর ওপর নির্ভর করে। দেশের সবখানে সব সময় যাওয়া যায় না। আর পরিবেশ নোংরা না করার জন্য প্রত্যেক সদস্যকে নির্দেশ দেওয়া থাকে।
বর্ষার শুরুর দিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া মানুষের ছবি বা তথ্য কম-বেশি সবার ফেসবুকের নিউজফিডেই এসেছে। আর এখন তো প্রতি সপ্তাহেই দল বেঁধে ইলিশ খেতে যাওয়ার ধুম পড়েছে মাওয়া বা চাঁদপুরে গিয়ে। বন্ধু-পরিজন ছাড়াও অনলাইনে গড়ে ওঠা ট্রাভেল গ্রুপ এর আয়োজক। গত কয়েক বছরে অনেকগুলো গ্রুপ হয়েছে। যারা দেশের আনাচকানাচে হরহামেশাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। চেনাচ্ছে অন্য বাংলাদেশকে।
এ ধরনের গ্রুপগুলোর পরিচালনাকারীরা বলছেন, তাঁরা কম খরচে মানুষকে বেড়ানোর সুযোগ দিতে চান। ‘বিন্দাস ট্রাভেল গ্রুপ’-এর বর্ণনার শুরুতেই লেখা ‘খরচ হোক কম, ভ্রমণ হোক বেশি’। এর উদ্যোক্তা রিদওয়ান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই টাকা যেন কারও ভ্রমণে বাধা না হয়। খরচ যত কমানো যায় সে চেষ্টা করি।’ বিন্দাস গ্রুপের সদস্য ৩৮ হাজার। এখন পর্যন্ত ৮০টির মতো ভ্রমণ হয়েছে। নিরাপত্তার প্রসঙ্গে বললেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখেন।
প্রতি মাসেই দু-একটি ভ্রমণের আয়োজন করে ‘বেড়াই বাংলাদেশ’। সদস্যদের তালিকাটাও বেশ বড়, ৮৩ হাজার। এর একজন তত্ত্বাবধায়ক জুবায়ের আবদুল্লাহ অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপ সম্পর্কে বলেন, ‘আগে মানুষ তথ্য জানত না। এখন যাওয়ার জায়গা সহজেই সামনে চলে আসছে। কেউ কোনো এক জায়গার সন্ধান পেলে তা ফেসবুকে পোস্ট করছে। সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে ওই জায়গার খবর।
দেশের পর্যটনশিল্প নিয়ে কী ভাবছে এই গ্রুপগুলো? বৃত্তের মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে দেশের এই অনলাইন গ্রুপই দেশের পর্যটনকে এগিয়ে নিচ্ছে। এক মাধবকুণ্ডের ঝরনা ছাড়া বাঙালি অন্য ঝরনার খোঁজ জানত না। এখন অনেক ঝরনার সন্ধান মিলছে। ট্রাভেল অপারেটর বা এজেন্সি যারা আছে, তারা সিলেট, সুন্দরবন বা কক্সবাজার ছাড়া কোথাও যায় না। কিন্তু এই গ্রুপগুলোই দেশের আনাচকানাচের সুন্দর জায়গা তুলে ধরেছে।’ তবে মাজহারুল বলেন, তাঁরা প্রায়ই দূরের কোনো জায়গায় যেতে অনুমতির সমস্যায় পড়েন। তাঁর চাওয়া, সরকার যেন অনলাইন গ্রুপকে কোনো এক কাঠামোয় নিয়ে আসেন।
‘বিন্দাস’-এর রিদওয়ান বলেন, স্থানীয় পর্যটনই তাঁদের উদ্দেশ্য। অন্য অপারেটররা প্যাকেজ ধরিয়ে দেন, নিজেরা যান না। কিন্তু অনলাইন গ্রুপের আয়োজকেরাও সদস্যদের সঙ্গে ভ্রমণে বের হন।
ভ্রমণ বাংলাদেশ, ওয়াইল্ড অ্যাডভেঞ্চার, ট্যুর গ্রুপ বিডি, ছুটি ট্রাভেল গ্রুপ, এক্সপ্লোর বাংলাদেশ, আরবান বাংলাদেশসহ অনেক গ্রুপই আছে, যারা প্রায়ই কোথাও না কোথাও ছুটছে। একটু বুঝে-শুনে বাংলাদেশের রূপের খোঁজে বেড়িয়ে আসতে পারেন অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপের সঙ্গে।