কেনাকাটায় অনলাইন শপিংয়ে তরুণরা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
মাকে সাথে নিয়ে ঈদের শাড়ি দেখছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইমা হোসেন। নিজের জন্য সালোয়ার-কামিজ, বাবার জন্য লুঙ্গি-পাঞ্জাবি, ভাইয়ের জন্য একটা হাত ঘড়ি পছন্দ করেছেন। তবে এসব তিনি দোকানে বসে দেখছেন না, দেখছেন নিজের বাসার কম্পিউটারে। ই-কমার্সের একটি সাইট থেকে তারা কাপড়ের রং, ধরন ও দাম যাচাই করে অর্ডার করেছেন।
কেন অনলাইনে কেনাকাটা জানতে চাইলে রাইমা বলেন, ব্যস্ততার কারণে শপিং করার খুব একটা সময় হয়ে ওঠে না। বাইরে ভ্যাপসা গরম, রাস্তায় যানজট আর ভিড় ঠেলে মার্কেটে যেতেও ইচ্ছা করে না। তাই অনলাইনে কেনাকাটা করা তার জন্য সবচেয়ে সহজ। প্রয়োজনীয় পণ্যের বেশিরভাগই তিনি অনলাইন থেকে কেনেন। কারণ হিসেবে বলেন, এক জায়গায় সব পণ্য একসাথে পান। ই-কমার্সের ওয়েবসাইটগুলোতে যে ফোন নম্বর দেওয়া থাকে সেখানে তাদের সাথে কথা বলে পণ্য সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা নেন। অর্ডার দেন। আর কোনো ঝামেলা ছাড়াই তার বাসায় পৌঁছে যায় পছন্দের জিনিসটি।
ঘরে বসেই কাঙ্ক্ষিত পণ্য কেনার সুযোগ থাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন শপগুলো। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে অনলাইন কেনা-কাটা সাড়া ফেলেছে তরুণদের মধ্যে। ঈদকে সামনে রেখে অনলাইন শপের আরো কদর বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাধে গ্রামের তরুণরাও এখন অনলাইন কেনাকাটায় ঝুঁকছেন।
একটি ই-কমার্স সাইট থেকে এবার ঈদের পাঞ্জাবি কিনেছেন বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান উদ্দিন। জানালেন, ফেসবুকে একটি ই-কমার্স সাইটের পেজ থেকে পোস্ট করা ঈদের পাঞ্জাবির কিছু ছবি তার চোখে পড়ে। এরপর সেখানে দেয়া নাম্বারে ফোন করে তিনি অর্ডার করেন। বিকাশের মাধ্যমে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করেন। অর্ডার দেয়ার পাঁচদিনের মধ্যে পোডাক্ট হাতে পান। এরপর তিনি বিকাশের মাধ্যমেই বাকি অর্ধেক টাকা এবং ডেলিভারি চার্জ পরিশোধ করেন। স্থানীয় মার্কেটে এসব পণ্য না পাওয়ায় এর আগেও অনলাইন শপ থেকে পণ্য কিনেছেন তিনি।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটার সুবিধার কারণে অনলাইনের বাজার পরিধি বাড়ছে। তাছাড়া এ ব্যবসায় লোকজন কম লাগে, বিক্রির জন্য বড় দোকানের প্রয়োজন হয় না।
এখনি ডটকম, অবিচল ডটকম, কিনলে ডটকম, আপনজন ডটকমসহ একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শহরের পাশপাশি তারা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও অর্ডার পান। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। ক্রেতাদের একটা বড় অংশ তরুণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সুবাধে তরুণরা তাদের অনলাইন শপগুলোর খোঁজ পান। শুধু পণ্যটি কোথায় পৌঁছে দিতে হবে, সেই ঠিকানা লিখে দেন ক্রেতারা। মোটামুটি এক সপ্তাহের মধ্যে ওই ঠিকানায় পৌঁছে যায়। এজন্য সার্ভিস চার্জ লাগলেও বাসায় বসে পছন্দের পণ্যগুলো দেখে কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাধে অনলাইন শপগুলো খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রত্যেক অনলাইন শপের ফেসবুকে নিজস্ব পেজ আছে। নতুন ও প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো বাজারে আসলেই ওইসব পেজ থেকে আপলোড দেয়া হয়। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্যটি খুঁজে পেতে তেমন বেগ পেতে হয় না। গত তিন বছর ধরে অনলাইন শপ থেকে বাজার করেন সারমিন তাসমিন।
অনলাইনে কেনাকাটা করে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, মানিগ্রাম অথবা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিয়া আহম্মেদ। তিনি জানান, অনলাইন বাজারে এক সাথে অনেক পণ্যের ছবি দেয়া থাকে। বিভিন্ন ই-কমার্সের সাইট ঘুরে পণ্যের দাম যাচাই করা যায় ঘরে বসেই। অন্যদিকে শপিং মলে ভিড় ঠেলে পছন্দের পণ্য খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। মান এবং দাম যাচাই করে পছন্দ করে কিনতে পারলে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে বাজার করা যায়।
কিনলে ডটকম এবং কিনলে জবস ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল মৃধা জানান, ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে বেচাকেনা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫শ পণ্যের অর্ডার পান। এখন তারা ঈদের উপকরণগুলোই বেশি বিক্রি করছেন।
দেশে এখন ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বাইরেও ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলেও বেচাকেনা করছেন অনেকে। বিভিন্ন শপিংমলের দোকানিরা নিজেরা ফেসবুকে পেজ খুলে নিজের দোকানের পণ্যেও প্রচার-প্রসারের পাশাপাশি বেচাকেনাও করেন। স্টাইল ওয়ার্ল্ড কালেকশন নামক একটি পেজে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৫ লাখ ৭ হাজার ৫০০ লাইক রয়েছে। তারা পোশাক বিক্রি করেন। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মিস পলি জানান, দুবছর ধরে তিনি তার দোকানের নামে পেজ খুলে পণ্যের প্রচার করছেন। এতে তার বিক্রি বেড়েছে।