বিকেলের ব্যবসা

বিকেলের ব্যবসা

  • শামীম রিমু

দিনেরবেলা আপনার চাকরি হয়তো বিরক্তিকর। তবে, নিজেই নিজের বস হয়ে ওঠা ভাল বেতনের চেয়েও বেশী অর্থপূর্ণ। তারপরও, উদ্যোক্তার পথে হাঁটার আগে ভালোমতো ভাবুন। ৯টা-৫টা কাজের থেকে এতে অনেক বেশী ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। প্রয়োজন হয় অনেক ত্যাগ স্বীকার এবং কঠোর পরিশ্রমের। তবে সাফল্যের মুখ দেখলে ঝরে যাওয়া সব ঘাম এবং অশ্রু স্বার্থক হয়ে উঠবে।

তবে নিজের ব্যবসার বাতি জ্বালাতে প্রথমেই যে আপনাকে চাকরি ছেড়ে একদম বেকার হয়ে যেতে হবে এমন নয়। সারাদিন অফিস শেষে বিকেল ৫ টার পরও আপনি আপনার ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।

অফিস শেষে যে ধরনের ব্যবসা পরিচালনায় আপনি সফল হয়ে উঠতে পারেন, সেগুলোর একটি তালিকা দেয়া হলো।


১। খাবার

যে ব্যবসা বা পণ্য কারো চাহিদা পূরণ করতে পারে তা সফল হবেই; আর খাবারের চাহিদা কার না রয়েছে? যদি আপনার বাসস্থানে একটি রান্নাঘর থাকে আর আপনি যদি রাঁধতে ভালোবাসেন, তাহলে অর্ধেক পথ আপনি এগিয়ে আছেন। আপনার পছন্দের রন্ধনপ্রণালীগুলো নিয়ে বসে যান, কারণ খাবারের চাহিদা সার্বজনীন এবং চিরস্থায়ী, তাই খাবারের ব্যবসা সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশী।

২। বিদ্যা বিক্রী

কোনো বিষয়ে যদি আপনি বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন, তবে সে ব্যাপারে জানার জন্য বা শিক্ষালাভ করতে পয়সা খরচ করবে এমন লোকের অস্তিত্বও খুব স্বাভাবিক। লিখে ফেলুন একটি ই-বই অথবা চালু করুন অনলাইন কোর্স। ডিজিটাল পণ্য একবার প্রস্তুত হয়ে গেলে তা বহুবার বিক্রী করা যায়।

৩। বিনোদিত করুন এবং শেখান

প্রতিদিন এক থেকে তিন ঘন্টা সময় খরচ করে পডকাস্টিং চালিয়ে গেলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনি একটি নির্দিষ্ট শ্রোতামণ্ডলী পেয়ে যাবেন। পরবর্তীতে আপনার এই শ্রোতার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে কোনো কোম্পানির স্পন্সরশিপ লাভ করাও অসম্ভব নয়। কোনো পণ্যের প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন হয়ে উঠবে আপনার বাড়তি আয়ের উৎস।

৪। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটগুলিতে আপনার প্রচুর সময় ব্যয় হয়ে যায়, তবে এই খরচ হয়ে যাওয়া সময়ের বিনিময়ে আপনি কিছু উপার্জনের আশা করতেই পারেন! ২০১৩ সালে ড্রীমফোর্স কনফারেন্সে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে এতে ২৫ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবসায়িক পাতা রয়েছে; এদের কোনো কোনোটির হয়তো আপনার দক্ষতার ব্যবহার খুব প্রয়োজন!

৫। ব্লগিং

অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য ব্লগিং একটি প্রভাবশালী মাধ্যম। প্রতিদিন হাজার হাজার ব্লগার লিখে যাচ্ছেন নানান বিষয়ের ওপর, যেমন- ভ্রমণ, রন্ধন, শিল্প, জীবনযাত্রা, বিপণন ইত্যাদি। নিয়মিত পাঠক সংগ্রহ, বিপণন, স্পন্সরশিপ, বিজ্ঞাপণের লভ্যাংশ, এসবের সংমিশ্রনে প্রতিদিন তারা উপার্জন করছেন। এছাড়াও একজন দক্ষ লেখক হিসেবে নিজের প্রচারণাও চলছে পাশাপাশি, যা আরেকটি উপার্জনের ভালো পথ।

৬। গ্রাফিক ডিজাইনিং

গ্রাফিক ডিজাইনিং সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা থেকে থাকলে Canva অথবা Visme ওয়েবসাইটগুলো থেকে খুব সহজেই শিখে নিতে পারেন গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের খুঁটিনাটি। শুধুমাত্র প্রয়োজন একটু একনিষ্ঠতা, ভালোবাসা এবং চর্চা। গ্রাফিক ডিজাইন করে উপার্জন করা মোটেও কঠিন কিছু নয়, উপরন্তু অনলাইন জগতে তা খুবই সম্ভাবনাময়।

৭। সঙ্গীত পাঠ প্রদান

যে যন্ত্রটি বাজাতে ভালোবাসেন, মানুষকে তা বাজাতে শেখান। যদি একাধিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যাকরণ আপনার আয়ত্তে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই! টিউটোরিয়াল ভিডিও নির্মানের মাধ্যমে আপনার উপার্জন হতে পারে আকাশছোঁয়া। বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে শিল্প ও সঙ্গীত সম্পর্কে শিক্ষাদান থেকে সরে আসছে, এটি হতে পারে আপনার জন্য সুবর্ণ সুযোগ।

৮। অ্যাপ্লিকেশন তৈরি

প্রোগ্রামিং বা কোডিং জানা থাকলে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেও আপনি উপার্জন করতে পারেন। এখন এমন একটি সময়ে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি, মনে হতে পারে যেন সবকিছুর জন্যই কোনো না কোনেসা অ্যাপ আছে। তারপরও, নতুন পরিকল্পনায় ভিন্নরূপে এসব অ্যাপ বিবর্তনে কোনো ক্ষতি নেই। ২০১৪ সালে ফ্রিল্যান্সার ডট কম সাইটে আই ফোন অ্যাপ মার্কেট থেকেই চার হাজারেরও বেশী জব পোস্ট করা হয়েছে।

৯। পোষা প্রাণির রক্ষণাবেক্ষণ

পোষা প্রাণির রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে উপার্জনের ক্ষেত্র বেশ বিস্তৃত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যারা কবুতর বা অন্যান্য পাখি পোষেন, সেসবের ডিম বা ছানা বিক্রী করে বেশ আয় করা যায়। তাছাড়া পাশের বাড়ির আন্টির কুকুরটিকে রোজ ঘন্টাখানেক হাঁটিয়ে নিয়ে এলে আন্টি যদি মাসিক কিছু টাকা দেন, তাহলেও বা মন্দ কি?

১০। মেরামত

গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি যদি আপনি মেরামত করতে পারেন, আপনার চাহিদা কখন কীভাবে মানুষের কাছে বেড়ে যাবে, তা আপনি নিজেই হয়তো জানেন না। তাই প্রথম দু’ একবার পয়সা ছাড়াই সেবা প্রদান করুন, আপনার জন্য ভালো বিজ্ঞাপন হয়ে যাবে। বিকেল পাঁচটার পর থেকে ফোনকল রিসিভ করতে করতে হাঁপিয়েও উঠতে পারেন এক সময়!favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment