বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা এলিনা মোর্স

বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা এলিনা মোর্স

  • সাখাওয়াত উল্লাহ বাঁধন

চকলেট এমনই একটা জিনিস, যা বয়স নির্বিশেষে প্রায় সকলেরই পছন্দ। যদি কারও চিকিৎসকের বারণ অথবা কেউ অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসচেতন না হন, তাহলে বয়স ভুলে অনেকেই এই চকলেটের লোভ সামলাতে পারেন না। শিশুরা না বুঝলেও প্রাপ্তবয়স্করা জানেন যে এই চকলেটের মতো মিষ্টিদ্রব্য খেলে দাঁতের কতোটাই না ক্ষতি হয়।

এই সমস্যার কথা চিন্তা করেই উদ্ভাবনী এক ললিপপ বাজারে এনে রীতিমত তোলপাড় শুরু করে দিয়েছিলেন ৭ বছর বয়সি এলিনা মোর্স।

তাঁর গল্পটি শুরু হয় যখন মাত্র সাত বছর বয়সি এই মেয়েটি তাঁর বাবার সাথে একটি ব্যাংকে যান। চকলেটের দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর বাবার কাছে একটি ললিপপ কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করেন। তাঁর বাবা তাঁকে ললিপপ খাওয়াতে নিরুৎসাহিত করেন এবং বলেন যে ললিপপ তাঁর দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। সেদিন তিনি খালি হাতেই বাসায় ফিরে যান, তবে তাঁর মনে আটকে ছিল হাজারো প্রশ্ন।

চকলেট খেতে এতো মজা, তবে এটা কেন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? এমন কি কিছু করা যায় যাতে করে এটির স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে এই ক্ষতিকারক উপাদান সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে দেওয়া যায়?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই জলিপপের আবিষ্কার করেন মাত্র ৭ বছর বয়সি এলিনা মোর্স।

সাধারণ চিনি ব্যবহার না করে এলিনা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করেন জলিপপ। তবে জলিপপ তৈরি করা এতোটাও সহজ ছিল না। প্রায় ছয়মাসের কঠিন পরিশ্রম, রিসার্চ এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই তৈরি হয়েছিল জলিপপ।

জলিপপ ছিল একটি চিনি এবং দুগ্ধ-মুক্ত চকলেট যা খেতে বেশ মজার এবং দাঁতের কোন ক্ষতি করেনা। এটি আবিষ্কার করার পরপরেই নিজের জমানো ৩৫০০ ডলার এবং নিজের বাবার কাছ থেকে ছোট একটি ফান্ড নিয়ে একটি কোম্পানি খুলে বসেন ছোট্ট এলিনা। প্রথম বছরেই তাঁর কোম্পানি ৭০ হাজার জলিপপ বিক্রি করে, এবং এরপর থেকে শুধু সাফল্যের স্বপ্নগাঁথা।

সেদিন থেকে কেটে গেছে প্রায় ৭টি বছর। ১৪ বছর বয়সি এলিনার জলিপপ বর্তমানে অ্যামাজনে তৃতীয় সর্বোচ্চ বিক্রিত ললিপপ, যা বিখ্যাত ব্রান্ডগুলোকেও ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৫ হাজার বিশালাকার রিটেইলারে তাঁর এই জলিপপ বিক্রি করা হয়।

সম্প্রতি ২০১৮ সালে তাঁর কোম্পানি প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্যান্ডি বিক্রি করে, যা প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো। বর্তমানে তাঁর সাথে ৭ জন কর্মচারী কাজ করে, এবং এলিনা একজন সফল উদ্যোক্তা।

ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁকে এন্ট্রাপ্রেনার ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তাঁকে ফিচার করা হয়েছিল। এছাড়া তাঁকে দুবার হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রিত করা হয়েছিল।

তাঁর এই সাফল্যগাঁথা প্রতিটি উদ্যোক্তার জন্য একটি চমৎকার অনুপ্রেরণা। বয়স নির্বিশেষে যে সফল একটি ব্যবসা দাঁড় করা যায়, তাঁর একটি উদাহরণ তৈরি করে দিয়েছেন এলিনা। এছাড়াও, সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে সমস্যার সমাধান করার যে ক্ষমতা দরকার, তাও দেখিয়ে দিয়েছেন এলিনা।

সবশেষে বলতেই হয়, উদ্যোক্তা হতে গেলে বয়স লাগে না। প্রয়োজন অসীম ধৈর্য এবং সমস্যা সমাধান করার একটি মনোভাব। সেই ব্যবসা সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞানও অর্জন করতে হয়। তাহলেই সফল একটি উদ্যোগ তৈরি করার কাজটি বেশ সহজ হয়ে পড়ে।

এমনই উদ্যোক্তা এবং উদ্যোগের সহায়তা করার জন্যেই চালু করা হয়েছিল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ডিপার্টমেন্ট। মাত্র ৫ বছরেই অনেকগুলো সফল উদ্যোগ তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ নেওয়াতে অনুপ্রাণিত করাতে সক্ষম হয়েছে এই ডিপার্টমেন্টটি। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের এই ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান রইল!

সাখাওয়াত উল্লাহ বাঁধন : শিক্ষার্থী, ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সূত্র: দ্য ইপোচ টাইমস

Sharing is caring!

Leave a Comment