উদ্যোক্তাদের বসে থাকলে চলে না

উদ্যোক্তাদের বসে থাকলে চলে না

  • তৌহিদুর রহমান

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে চলছে সাধারণ ছুটি। এটিকে সাধারণ ছুটি না বলে কার্যত আংশিক লকডাউনও বলা চলে।  কাজ বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মানুষ ঘরবন্দী হয়ে আছে। তীব্র সংকটে ভুগছেন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো। অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন দেশের তরুণ উদ্যোক্তারা।

লকডাউনে এই তরুণ উদ্যোক্তাদের জীবনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। চোখে হাজারো সপ্ন থাকার পরও অনেকেরই থেমে যেতে হচ্ছে মাঝপথে। কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তার সাথে কথা বললে তারা তাদের নানাবিধ সমস্যার কথা তুলে ধরে। তাদের মধ্যে একজন উদ্যোক্তা মো. আল আমিন। পেশায় ছাত্র হলেও পাশাপাশি তিনি আকাশনীলা নামে হস্ত এবং কুটির শিল্পের একটি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালান। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয় এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য তার এই চেষ্টা। করোনাকালীন লকডাউনে পুরোপুরি বদলে গেছে তার ব্যাবসার চিত্র। তিনি জানান, “লকডাউনে ঘরবন্দি থাকার কারণে মানুষ এখন বেঁচে থাকার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাদে বাড়তি কোন পণ্যই তেমন একটা কিনছেন না। আবার যাতায়াত ও পণ্য আদান প্রদান করাও অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছে। এজন্য পণ্য উৎপাদন এবং মজুদ অনেক ব্যায়বহুল হয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাবসায় এখন লাভ নেই বললেই চলে। তবুও ব্যাবসা টিকিয়ে রাখতে আমাদের নিয়মিত লোকসান গুনেই কাজ করে যেতে হচ্ছে।”

আরেকজন তরুণ উদ্যোক্তা আহসান আল রিফাত। পড়ালেখার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন এবং সফল উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ কয়েকবার পত্র পত্রিকায় নামও এসেছে। জিতে নিয়েছেন উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন পুরষ্কারও। পড়াশোনা শেষ করে নিজের প্রতিষ্ঠিত একাধিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে নতুন উদ্যোমে যাত্রা শুরু করার পরপরই আটকে যান এই করোনার ক্রান্তিলগ্নে। তাঁর ব্যাবসায়িক এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থার বর্তমান চিত্র জানতে চাইলে তিনি বলেন “আমি একটি আইএসএসবি ভর্তি কোচিং পরিচালনা করি। লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে আমাকে অনলাইন ক্লাস নিতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ ছাত্ররা এখনো অনলাইনকে শুধুমাত্র বিনোদনের খোরাক হিসেবেই দেখে বলে অনলাইন ক্লাসে ছাত্রদের আগ্রহ খুবই কম। তাই উপস্থিতিও কম। আর আমি যেহেতু ডিফেন্স ভর্তি কোচিং পরিচালনা করি তাই আমাকে বেশিরভাগ সময় স্ব-শরীরে প্র্যাকটিকাল ক্লাস নিতে হয় যা অনলাইনে নেয়া সম্ভব না।”

এই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। তাঁর এই পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রতি ঈদেই নতুন নতুন পোশাক ডিজাইন এবং তৈরি করে বেশ ভালো অংকের লাভ হতো। যেহেতু করোনার ভয়ে নতুন পোশাক নিয়ে মানুষের মাঝে তেমন একটা আগ্রহ নেই তাই এই ঈদে এই সেক্টরে আমি কোনো লাভের মুখ দেখতে পাইনি”। এছাড়াও তিনি এতদিন শখের বসে একুরিয়াম বানিয়ে ভাল মূল্যেই বিক্র‍য় করতেন। লকডাউনের কারণে এই ধরনের পণ্যের প্রতি মানুষের কোনো চাহিদা না থাকায় গত চারমাসে কোনো অর্ডার পাননি বলেও জানান। এই পরিস্থিতিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের করণীয় কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু আমরা উদ্যোক্তা তাই আমাদের সবসময়ই নতুন এবং যুগোপযোগী ব্যাবসার আইডিয়া নিয়ে ভাবতে হয়। যেহেতু মানুষের কাছে এখন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদাই বেশি তাই আমি গত কিছুদিন যাবত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অনলাইন ব্যাবসা শুরু করেছি।পাইকারী মূল্যে সতেজ শাকসবজি, কাচাবাজার এবং ফলমূল কিনে তা অল্প লাভে বিক্রি ও নিজেই হোম ডেলিভারি দিচ্ছি।  তবে এতে লাভ একদমই সীমিত যা আমার পূর্বের ব্যাবসার লাভের তুলনায় খুবই নগন্য। তবুও উদ্যোক্তাদের বসে থাকলে চলে না তাই এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। “

Sharing is caring!

Leave a Comment