বিদেশে উচ্চশিক্ষা : প্রস্তুত হয়ে পড়তে যাই
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন থাকে অনেকেরই। সে স্বপ্ন পূরণের জন্য কেউ কেউ বিদেশেও পাড়ি জমান। বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের বিষয়টি অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতির। ভালো ফল করার পাশাপাশি প্রয়োজন মানসিক প্রস্তুতি। কেননা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আর্থিক সার্মথ্য থাকার পরও অনেকে বিদেশে পড়তে গিয়েও ফেরত আসেন। কারণ বিদেশে গিয়ে সে দেশের আবহাওয়ার সাথে তারা মানিয়ে নিতে পারেনা। তাই বাইরে উচ্চশিক্ষা নিতে গেলে যেসব বিষয়ে নজর রাখবেন:
১. আবহাওয়া
বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে ইউরোপ–আমেরিকা, এমনকি প্রাচ্যের জাপান কিংবা উত্তর চীনের আবহাওয়ার পার্থক্য অনেক। আবহাওয়া মানুষের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনে গভীর ভূমিকা রাখে। নিজ অভিজ্ঞতা লাভের পূর্বে সেটা উপলব্ধি করা যায় না। ভিন্ন আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।
২. খাওয়া–দাওয়া
আমরা ভাতপ্রধান দেশের মানুষ। শৈশব থেকে ভাত–তরকারি খেয়ে বেড়ে ওঠা। ইউরোপ–আমেরিকায় প্রধান খাবার আলু, পাউরুটি, পাস্তা ইত্যাদি। ভাত, মাছ–মাংসও আছে। এখানকার খাবারের ধরন মোটেও বাঙালি খাবারের মতো নয়। সে খাবার অনেকেরই পছন্দ নয়। অন্যদিকে বাঙালি খাবার রান্না করা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ভিন্ন সংস্কৃতির খাবারের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থাকা ভালো।
৩. দায়িত্ব
বিদেশে আঠারো বছর পরে সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। নিজেরাই জীবনের সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। জীবনটাকে সবাই একান্ত নিজের ভাবে। দায়িত্বগুলোও তাই নিজের। এখানে বাংলাদেশের মতো গভীর পারিবারিক বন্ধন নেই। এ সমাজে তাই প্রতিটি কাজে নিজেকেই হতে হয় অভিভাবক। এই দায়িত্ববোধ বিষয়টি আমাদের ততটা থাকে না। ছোট বয়স থেকেই প্রয়োজনে দায়িত্ববোধ বাড়ানো ও স্বতন্ত্র হওয়ার চেষ্টা করা ভালো।
৪. রান্না ও অন্যান্য ঘরোয়া কাজ
পশ্চিমা বিশ্বে কাজের লোক নেই। ঘরোয়া কাজে সাহায্য করার জন্য কাউকে পাওয়া যাবে না সেখানে। নিজের হাত জোড়াই বন্ধু। রান্না, ঘর পরিষ্কার, কাপড় পরিষ্কার যাবতীয় সব কাজ নিজেকেই করতে হবে। পুরুষের কাজ, নারীর কাজ বলে কিছু নেই। কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
৫. আত্মবিশ্বাস
আমাদের একটি ধারণা, বিদেশিরা আমাদের চেয়ে মেধায়–মননে ও চিন্তায় অনেক উন্নত! এমন ধারণা ও ভাবনা অনেক সময় আমাদের আত্মবিশ্বাস হ্রাস করে। আমরা নিজেদের সাহসের সঙ্গে তুলে ধরতে জানি না। এই আত্মবিশ্বাস কমলে চলবে না। মেধায় বাঙালি আর বিলেতি বলে কিছু নেই। আমার মেধা বিকাশের জন্য আমার চেষ্টাই প্রধান। আত্মবিশ্বাস কমানো যাবে না, আবার নির্বোধ–অহংকারীও হওয়া যাবে না।
৬. সংস্কৃতি
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে প্রতীচ্য ও পশ্চিমের সংস্কৃতির অনেক ব্যবধান। এই ব্যবধানে নিজেকে কীভাবে সাম্যাবস্থায় রাখতে হবে, সেটা অনেকে বোঝে না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের অভিরুচি, দর্শন, ইচ্ছা–অনিচ্ছা ইত্যাদি ব্যক্তিগত। এগুলোর সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে অনেকে মানসিকভাবে ভালো থাকে না, আবার অনেকের সমস্যা হয় না। সুতরাং ভিন্ন সংস্কৃতিতে নিজের ভালো–মন্দ নিজেকেই বুঝতে হবে গভীরভাবে। নিজের গভীরতা বুঝে আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রপ্ত করতে জানতে হবে।
৭. পড়াশোনার চাপ
গবেষণানির্ভর বিষয়গুলোতে (রসায়ন, প্রাণরসায়ন, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি) প্রচুর পড়তে হয়। বাংলাদেশে এত কাজ করতে হয় না, যেহেতু সেখানে অত গভীর গবেষণা নেই। এই চাপটা সহজভাবে নিতে হবে। মানসিক যন্ত্রণায় ভুগলে হবে না। দিনে অন্তত ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে, সপ্তাহে কমপক্ষে ছয় দিন, অবশ্য প্রয়োজন অনুসারে কাজের চাপ ভিন্ন হতে পারে।
৮. একাকীত্ব ও ঘরের টান
প্রবাসে একাকীত্ব অনুভব করেন অনেকেই। গৃহমায়া বা হোম সিকনেস থাকে। পারিবারিক একটি বন্ধন থেকে অনেক দূরে এসে একা মনে হয়। এসব বিষয় অনেক সময় কাজের ওপর প্রভাব ফেলে। দূরদেশ থেকে চাইলেই যখন–তখন দেশে যাওয়া যায় না। তাই এগুলো জয় করতে হবে। জীবনে অর্জন করতে গেলে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। এটা হাসিমুখে মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
এ বিষয়গুলো নিয়ে ভয়ের কিছু নেই কিংবা স্বপ্ন থেকে পিছপা হওয়ার কিছু নেই; বরং মানসিক প্রস্তুতির জন্য এগুলো জানা থাকা উচিত। সঠিক, সর্বোচ্চ প্রস্তুতি মানেই সেরা ফল। শুধু স্বপ্ন দেখলে হয় না। প্রয়োজন হয় সঠিক প্রস্তুতির। আর প্রস্তুতির জন্য সুগম ও দুর্গম সব পথই জানতে হয়।