যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাদের স্বাগতম
- মার্শা বার্নিকাট
আমি বাংলাদেশের সেই সকল শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানাই যারা উচ্চ-শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদিত ৪,৫০০-এর বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির কাগজপত্র পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়েছেন ও উদ্ভাবক হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এবং আপনাদের গর্বিত হওয়া উচিত, কারণ আপনারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন এমন একদল বাছাই করা তরুণের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য—যাদের জীবন চিরতরে বদলে যাবে যখন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে এইসব প্রাণচঞ্চল, উন্মুক্তমনা এবং মানসম্পন্ন ক্যাম্পাসে তারা অধ্যয়ন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন ভর্তির অনুমোদন দিয়ে আবেদনকারীকে কাগজপত্র পাঠিয়ে থাকে তা হয়ে থাকে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সুচিন্তিত মতামত ও কঠোর পরিশ্রম এবং সেই সব আবেদনপত্র নিয়ে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চুলচেরা পর্যালোচনার ফসল। ভর্তি আবেদনের সময়ে লিখিত রচনায় আপনাদের স্বপ্ন ও চিন্তার প্রতিফলনে আপনাদের উদ্যম ও সৃজনশীলতার যে প্রকাশ ঘটে থাকে, ইংরেজি ভাষা ও অন্যান্য পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনাদের কঠোর পরিশ্রমের প্রতিফলন থাকে, এবং সামাজিক সেবা ও পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতির আমরা স্বীকৃতি দিয়ে থাকি।
এখন ১০ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকদিন ধরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের তীর্থভূমি হিসেবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের চোখে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক অতুলনীয় আমেরিকার সাক্ষ্য বহন করে।
যুক্তরাষ্ট্রে উজ্জ্বল ও মেধাবী শিক্ষার্থী পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ৬,৫০০-এর বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম এবং স্নাতক পর্যায়ে ২৬তম।
বৈচিত্র্যপূর্ণ পটভূমি থেকে আসা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জাতির শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সম্পর্ক গড়ে তোলে, জনগণ ও সমাজের মাঝে সুসমপর্ক তৈরি করে—যা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয়। আমরা সকলের অন্তর্ভুক্তিকে মূল্য দেই, এবং শ্রেণিকক্ষ ও এর বাইরে অন্যান্য ও বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সকল ক্যাম্পাসে বর্ণ, নৃ-গোষ্ঠী, ধর্ম এবং অঞ্চলভেদে সকল শিক্ষার্থীকেই সহায়তা করে থাকি। এই মিথস্ক্রিয়ার দরুন সৃষ্ট চমত্কার সুযোগের ফলে আমেরিকার শিক্ষার্থীদের মাঝেও সমাজে বিশ্বের ব্যাপারে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তৃত হয়, যা পরস্পর সংযুক্ত এই বিশ্বে সকলের জন্য সফলতর ভবিষ্যত্ গড়তে আমাদের সকলকে প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।
সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও উষ্ণ অভ্যর্থনার পরিবেশ প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গর্বিত, এবং আমি জোর দিয়ে জানাতে চাই যে যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের কতটা উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়ে থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই একত্রিত হয়েছে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের একটি সুনির্দিষ্ট ও সরাসরি বার্তা পৌঁছে দিতে #YouAreWelcomeHere এই প্রচারণার মাধ্যমে। আমিও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আপনাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানাই, যেখানে আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূল্যবান শিক্ষার সুযোগ করে দিয়ে আপনাদের জীবন এবং পেশাগত লক্ষ্য অর্জনে আপনাদেরকে সহায়তা করবে।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কনস্যুলার কর্মকর্তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করে থাকে যোগ্য শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে। ভিসা প্রক্রিয়া ও ভিসা পাবার যোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য আপনারা পাবেন এই লিঙ্কে — https://travel.state.gov/content/visas/en.html অথবা এই লিঙ্কে — https://bd.usembassy.gov/visas/। বিশ্বব্যাপী ‘এডুকেশন ইউএসএ’-র উপদেষ্টারা সদা প্রস্তুত থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে।
https://educationusa.state.gov/ – এই ওয়েবসাইট-এ আপনারা একজন শিক্ষা উপদেষ্টা পাবেন ও বাংলাদেশে অবস্থিত তিনটি এডুকেশন ইউএসএ সেন্টারের ব্যাপারে আরো তথ্য জানতে পারবেন। এছাড়াও ভিসা আবেদন নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রতি বৃহস্পতিবার আমরা আমাদের ফেইসবুক পেইজে সাপ্তাহিক ভিসা চ্যাট-এর আয়োজন করে থাকি।
আরেকটি তথ্যের উৎস হচ্ছে আমেরিকান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন www.aaa.net.bd, এটি সেই সব বাংলাদেশির একটি সংগঠন যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি লাভ করেছেন এবং যারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শিক্ষা-জীবনের উপকারিতা নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের উৎসাহিত করতে চাই যে, যারা ভর্তির অনুমোদন পেয়েছেন তারা যেন এই জীবন বদলে দেওয়া সুযোগটি গ্রহণ করেন এবং আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষার অনন্য সুযোগের অভিজ্ঞতা নিতে আপনাদের সাথীদের সঙ্গে যোগ দেন।
আমেরিকার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছে, তেমনি আমেরিকার জনগণ ও সমাজও আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছে।
লেখক :বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত