রাশিয়া-আমেরিকার বিদায়, এবার কার হাতে আফগানিস্তান?

রাশিয়া-আমেরিকার বিদায়, এবার কার হাতে আফগানিস্তান?

  • নিলয় বিশ্বাস

বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমান  সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ধূসর মরুভূমি ও পাহাড়ে-ঘেরা আফগানিস্তান। আফগান ভবিষ্যৎ কাদের হাতে এটা নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে অনেকের প্রশ্ন,’ কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে দেশটি?’।  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সব সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তার দেয়া ভাষণে  তিনি বলেন, ‘এখন সৈন্যদের ঘরে ফেরার সময় হয়েছে।’ 

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (জুনিয়র) এ সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ হিসেবে অভিহিত করে বিশেষত আফগান নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। এদিকে তাদের অধিকৃত অঞ্চলসমুহে ১৫ থেকে ৪৫ বছরের সব অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত বা স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা নারীদের তালিকা চেয়েছেন জো বাইডেন।

দ্যা হিল মিডিয়ার মতে, রাশিয়া ও ূহেরিকার পর পরাশক্তি চীন আফগানিস্তানের প্রবেশের সুযোগ খুঁজছে। আমেরিকা-রাশিয়া থেকে চীনের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে । এর মূল কারণ হলো আফগানিস্তানের সঙ্গে চীনের সীমান্ত আছে। অনেক দিন ধরে চীন আফগানিস্তানকে হাতে নিতে চাইছে, কারণ সে দেশের রূপার খনি এবং সঙ্গে রয়েছে সোনা, ইউরেনিয়াম ও লিথিয়াম। আর মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার কারণে এটি মোক্ষম সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনের কাছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে আফগানিস্তানে কাজও করছে চীন। 

এদিকে আফগান সেনাবাহিনীও নিজেদের পতন হারে হারে টের পাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাবুল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিবে তালেবানরা। গত মাসে মারা গিয়েছেন এই  আফগান যুদ্ধের কারিগর ডিফেন্স সেক্রেটারি ডোনাল্ড রামেসফেল্ড । 

এদিকে জো বাইডেন নাইন-ইলেভেনের ২০ বছর পূর্তির আগেই দুই দশকের যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে চাইছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘস্থায়ী আফগান যুদ্ধ শেষ করতে এক চুক্তিতে পৌঁছায়। 

দীর্ঘ এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দুই ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় এবং ২ হাজার ৪০০ মার্কিন সৈন্য  নিহত হন। তবে গত ১৬ মে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং জি এত দ্রুত সৈন্য প্রত্যাহারের সমালোচনা করে বলেন, এতে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে। 

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের সঙ্গে পূর্ব ও দক্ষিণে পাকিস্তান, পশ্চিমে ইরান, তুর্কিমিনিস্তান, উজবেকিস্তান, উত্তরে তাজিকিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে চীনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। আর এই বিশাল সীমান্ত কে কাজ লাগাতে চায় চীন। 

বিশ্ব মিডিয়া গুঞ্জন চলছে, তালেবানদের বর্তমানে গোপনে সাহায্য করছে চীন। কেননা কাবুল সরকার চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আগ্রহী নয়। আর এই সুযোগেই তালেবানদের সমর্থন করছে বেইজিং সরকার। 

অন্যদিকে ভারত-চীন সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই ভালো যাচ্ছে না। ভারত চাইছে কাবুল সযেন চীনের হাতে না চলে যায়। কাবুলে চীনের হাতে চলে গেলে ভৌগোলিক দিক দিয়ে অনেকটাই কাবু হয়ে যাবে ভারত। এই অঞ্চলে ইতোমধ্যেই ভারতের অবস্থান নাজুক। পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের সাথে পুরনো শত্রুতা তো  রয়েছেই। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার চাইছে চীন আফগানিস্তানের পক্ষে আসুক। 

তবে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, কাদের নিয়ন্ত্রণে চলবে কাবুল! 

লেখকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Sharing is caring!

Leave a Comment