বৈদ্যুতিক গাড়ি টেসলা

বৈদ্যুতিক গাড়ি টেসলা

  • আব্দুল হান্নান

দিন বদলেছে। দেশে দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইলেক্ট্রিক গাড়ি। গাড়ি কেনার সময় পেট্রোল চালিত গাড়ির পাশাপাশি ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে মানুষ। এই দিন বদলের পেছনে যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় তা হলো টেসলা, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ইলেক্ট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান।

টেসলা মোটর্স‌ কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে ২০০৩ সালের ১ জুলাই । প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ছিলেন মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টার্পেনিং নামক দুই ইঞ্জিনিয়ার।

প্রথমদিকে তাদের নিজেদের টাকা পয়সা দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছিলেন তারা।

কিন্তু গাড়ি উৎপাদনে যেতে হলে প্রয়োজন বিশাল অঙ্কের অর্থ, যা তাদের একার পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব ছিল না। তাই তারা টেসলার জন্য নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজতে শুরু করেন।

এলন মাস্ক নতুন বিনিয়োগকারী হিসেবে টেসলাতে যুক্ত হন।

প্রাথমিকভাবে এলন মাস্ক ৬.৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করেন। এই বিনিয়োগের পর তিনি টেসলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০০৮ সালের মার্চে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় রোডস্টারের। এটি ছিল টেসলার জন্য এক অভূতপূর্ব মূহুর্ত। কারণ প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় তারা রোডস্টারের মতো অসাধারণ একটি বৈদ্যুতিক স্পোর্টস্‌ কার তৈরি করতে সক্ষম হয়। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার ডলারের মধ্যে। 

৬,৮৩১ টি পৃথক লিথিয়াম-আয়ন সেল সম্বলিত রোডস্টারের ব্যাটারি সিস্টেমটি ছিল অনবদ্য। একবার পূর্ণাঙ্গ চার্জে প্রায় ২৫০ মাইল অতিক্রম করতে পারত এটি। ০-৬০ মাইল/ঘন্টা গতি তুলতে পারতো মাত্র ৪ সেকেন্ডে। এর ব্যাটারির স্থায়িত্বকাল ধরা হয় প্রায় পাঁচ বছর এবং নষ্ট হওয়ার আগে এর দ্বারা প্রায় ১ লক্ষ  মাইল অতিক্রম করা সম্ভব। 

২০১০ সালে রোডস্টার বিক্রি করে টেসলা বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে।  

এই সাফল্যের উপর ভর করে তারা ২০১১ সালে মডেল ‘এস’ নামে নতুন একটি গাড়ির প্রটোটাইপ উন্মুক্ত করে। এর মূল্য নির্ধারিত হয় ৭৬,০০০ ডলার, যা রোডস্টারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। মডেল এস’ বাজারে আসে ২০১২ সালে।

রোডস্টারের মতো মডেল এসও সবার মন জয় করে নেয়।

এর সর্বোচ্চ গতি ছিল প্রায় ২৪৯ কি.মি/ঘন্টা এবং মাত্র ৩.২ সেকেন্ডেই এটি ৬০ মাইল/ঘন্টা গতি তুলতে সক্ষম।

২০১২ সালে মডেল এস এর পাশাপাশি টেসলা প্রথমবারের মতো আমেরিকাতে তাদের ছয়টি দ্রুতগতির চার্জিং স্টেশন চালু করে। এগুলোর নাম রাখা হয় সুপারচার্জার। সময়ের সাথে সাথে এর সংখ্যা তারা বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১,২০০টি সুপারচার্জার রয়েছে টেসলার, যেখানে একজন টেসলা গাড়ির  মালিক দ্রুতগতিতে চার্জিংয়ের কাজ সেরে নিতে পারেন।

২০১৫ ও ২০১৭ সালে মডেল এক্স এবং মডেল থ্রি নামে আরও নতুন দুটি মডেলের গাড়ি বাজারে আনে টেসলা। এর মধ্যে মডেল থ্রি ছিল তাদের তৈরি সবচেয়ে কম মূল্যের গাড়ি। পূর্বঘোষিত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এর শুরুর দিকে মূল্য ছিল মাত্র ৩৬,২০০ ডলার! এই দুটি গাড়িও ক্রেতাদের মন জয় করে নেয়।

শতভাগ সফল চারটি গাড়ির মডেল তৈরি করা টেসলার যেখানে আকাশে ওড়ার কথা সেখানে এলন মাস্কের কিছু বেফাঁস মন্তব্য কোম্পানিকে বিপদে ফেলে দেয়। এর জের ধরে ২০১৮ সালে টেসলা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্য হারায়।শুরুর দিকের আর্থিক সমস্যার কঠিন সময় বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে টেসলা। ২০১৯ সালে বৈশ্বিক বাজারে যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে তার প্রায় ১২% টেসলার দখলে। বর্তমানে টেসলা তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করতে কাজ করছে।

প্রতিবেদকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Sharing is caring!

Leave a Comment