চাই সুন্দর পৃথিবী : লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও

চাই সুন্দর পৃথিবী : লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও

হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর জন্ম ১১ নভেম্বর, ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিায়ায়। টাইটানিক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি খ্যাতির চুড়ায় পৌছেন। এছাড়া তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, ব্লাড ডায়মন্ড, দ্য এভিয়েটর ইত্যাদি। সম্প্রতি দি রেভেন্যান্ট চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’র সেরা অভিনেতার পুরষ্কার লাভ করেছেন এই হলিউড স্টার। ২২ এপ্রিল, ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘আর্থ ডে-২০০০’ উপলক্ষে একটি বক্তব্য দেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। সেই বক্তৃতার নির্বাচিত অংশ ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন মারুফ ইসলাম


tumblr_l806pdNvKJ1qdwsneo1_400আমি বক্তৃতা শুরু করছি আমার পরিবারের একটি গল্প দিয়ে। আমার দাদার বাড়ি জার্মানিতে। তিনি একটি কয়লা খনিতে কাজ করতেন। গল্পটা সেই কয়লা খনির মালিককে নিয়ে। শহর কর্তৃপক্ষ সেই মালিককে চাপ দিচ্ছিল যাতে তিনি তার খনিতে উঁচু চিমনির ব্যবস্তা করেন। কারণ খনির কালো ধোঁয়া শহরকে দুষিত করে। ভদ্রলোক রাজি হলেন। কিন্তু চিমনি তৈরির সময় হঠাৎ বলে বসলেন, চিমনি যদি গির্জার চূড়ার চেয়ে বেশি উঁচু হয়, তবে তা হবে ধর্মের প্রতি চরম অবমাননা। অতএব চিমনি না বসানোই ভালো। ফলে এক সময় কয়লা খনির কালো বিষাক্ত ধোঁয়া শহরময় ছড়িয়ে পড়ল। অসুস্থ হয়ে পড়ল তার শ্রমিকরা। আমার দাদাও ছিলেন সেই অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের একজন।

এভাবেই এক নির্বোধ শিল্পপতি শুধু নিজের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে গোটা শহরের পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছিলেন। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন, পৃথিবীর পরিবেশ আজ মারাত্মক হুমকির মুখোমুখি। আমাদের সুপেয় পানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সমুদ্র দূষিত হয়ে পড়ছে, জলাভূমিগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিপুল মাছের ভাণ্ডার বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

আমরা কীভাবে এমন অবস্থায় এসে পড়লাম? খুব সহজভাবে বলতে গেলে, সেই খনি-মালিক যেমন বর্তমানকে ভেবে ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে ফেলেছিলেন, ঠিক সেভাবে আমরাও এই পৃথিবীকে দুষিত করে ফেলছি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমরা পৃথিবীর অনবায়নযোগ্য শক্তি ও সম্পদের ভান্ডার নিঃশেষ করে ফেলছি। নিজের হাতে নিজেরাই পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনছি।

সমস্যা হচ্ছে, পৃথিবীর আবহাওয়া যেটুকু কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে, তার চেয়ে অনেক বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। এই অতিরিক্ত গ্যাসের ফলে পৃথিবীর ভিতরের তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। দৈনন্দিন জীবনে তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বাড়লে বা কমলে তা আমাদের কাছে ধরা পড়ে না। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে সবখানে যদি তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি বেড়ে যায়, তাহলে তা এক মহাদুর্যোগের সৃষ্টি করতে পারে। এই ভয়াবহ পরিণতি আমাদের ঠেকাতেই হবে।

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র শতকরা ৮ জন বাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, গোটা পৃথিবীর বর্জ্যের ৪০ শতাংশ এই একটি দেশ থেকেই উৎপাদিত হয়। ভাবা যায়!

আমার দাদার সময়ে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির কথা ভাবাও যেত না। চিমনির ধোঁয়া কিংবা দূষণ ছাড়া শক্তি উৎপাদন করা যাবে, এ ছিল স্বপ্নের অতীত। কিন্তু এখন আমাদের হাতে নানা-প্রযুক্তি আছে, যা দিয়ে আমরা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে পারি। সৌরশক্তি এখন আর নতুন কোনো ধারণা নয়। নানা জায়গায় নানাভাবে তা সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বায়ুশক্তিও ভালো সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, আর হাইড্রোজেনকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহারের প্রযুক্তি এক নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করেছে।

কিন্তু এই প্রযুক্তিগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে না জানলে সত্যিকারের সুফল পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র শতকরা ৮ জন বাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, গোটা পৃথিবীর বর্জ্যের ৪০ শতাংশ এই একটি দেশ থেকেই উৎপাদিত হয়। ভাবা যায়!

অনেক হয়েছে! এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। একটি সুন্দর পৃথিবী চাই। একটি বাসযোগ্য পৃথিবী চাই। এজন্য আমাদেরকে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে এবং তা করতে হবে এখন থেকেই। এই চেতনা শুধু একটি ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মধ্যে এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে তা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে; যাতে করে পরিবেশ, সরকারের নীতি আর সাধারণ মানুষের জীবন—এই বিষয়গুলো এক সুতায় গাঁথা থাকে।

সূত্র : ট্রাইপড ডটকম

Sharing is caring!

Leave a Comment