‘মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান’

‘মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান’

  • লিডারশিপ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস সাময়িকীর করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন হলিউড অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসন। পর্দার ব্যস্ততম এই তারকা সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন।


‘তুমি কি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেছ?’
এই প্রশ্ন মা আমাকে করেছিলেন ১৫ বছর বয়সে। তখন আমি সদ্যই আমার শরীরে একধরনের পরিবর্তন লক্ষ করতে শুরু করেছি।

আমি সাধারণত ব্যক্তিগত বিষয় বা আমার পরিবার নিয়ে কথা বলতে চাই না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আমার তেমন কোনো উপস্থিতি নেই। কিন্তু আমার মনে হয়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের সত্যিই খুব ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলার সময় এসেছে।

তো যা বলছিলাম। ১৫ বছর বয়সে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করতে আমি প্ল্যানড প্যারেন্টহুডে (স্বাস্থ্যসেবা দেয়, এমন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান) গেছি। তখন নিউইয়র্কে থাকতাম। মা যখন আমাদের ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়া চলে গেলেন, আমি আর আমার ভাই হান্টার থাকতাম বাবার সঙ্গে। তখন বিনোদনজগতে কাজ করতে শুরু করেছি। আমি সৌভাগ্যবান, নিজের জন্য একটা স্বাস্থ্যবিমা করে নেওয়ার সামর্থ্য আমার হয়েছিল। শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে আমি ভীত ছিলাম। প্ল্যানড প্যারেন্টহুডের চিকিৎসক সেই ভয় দূর করেছেন। খুব আগ্রহ নিয়ে তিনি নিয়মিত আমার চেকআপ করেছেন, বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন।

যখন শুনেছি, আজ আমাকে এখানে নারী স্বাস্থ্য ও প্রজনন নিয়ে কথা বলতে হবে, খুব আগ্রহ নিয়ে আমি হাজির হয়েছি। আমি জানি, এখানে উপস্থিত প্রত্যেক মেয়ের কাছেই প্ল্যানড প্যারেন্টহুড নিয়ে কোনো না কোনো গল্প আছে। প্রায় ২৫ লাখ মার্কিন নাগরিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য কোনো না কোনোভাবে প্ল্যানড প্যারেন্টহুডের ওপর নির্ভরশীল। ক্যানসার ও যৌনরোগ নির্ণয়, জন্মনিয়ন্ত্রণ, গর্ভবতী মায়েদের পরিকল্পনা, নিরাপদ গর্ভপাত—নানা বিষয়ে তারা মানুষকে সহায়তা করে আসছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমি আপনাকে ভোট দিইনি। আপনি আমাদের দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, আপনার পদটাকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমি চাই আপনার পাশে থাকতে। কিন্তু আগে আপনি আমার পাশে দাঁড়ান। আমার বোনের পাশে দাঁড়ান, আমার মায়ের পাশে দাঁড়ান, আমার বন্ধুদের পাশে দাঁড়ান। সেই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান, যারা আপনার আসন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে নিদারুণ উৎকণ্ঠায় আছে।

আমার মেয়ের পাশে দাঁড়ান। আমি সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছিলাম বলেই আজ যার জন্ম হয়েছে। এমনকি আপনার মেয়ে ইভাংকাও এই স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে। সেই একই সেবাটা আমার মেয়ে পাবে না, তা কী করে হয়? নারীর পাশে দাঁড়ান, যারা এখনো প্রতিটি ক্ষেত্রে সম-অধিকারের জন্য লড়াই করছে।

এবারের নির্বাচনের ফলাফল শুনে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘ওহ্‌হো! আমাদের অনেক কাজ করতে হবে!’ সামনে কঠিন সময় আসছে। আমি আমার কাঁধে দায়িত্বের ভারটা অনুভব করতে পারছি।

কিন্তু একই সঙ্গে আমার দুর্ভাবনা একটুখানি কমে গেল, যখন বুঝলাম, একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনার এটাই তো সুযোগ। শুধু ভবিষ্যৎ মার্কিন নাগরিকদের জন্য কিছু করার সুযোগ এসেছে তা নয়, আমাদের দায়িত্ববোধটা জাগিয়ে তোলারও এটাই সুযোগ। এই সুযোগে আমরা সমাজের জন্য কিছু করতে পারি।

এই দায়িত্বের ভার যেন আমাদের থমকে না দেয়, বরং সাহস জোগায়। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, নারীস্বাস্থ্য সুরক্ষার দাবিতে সব ধরনের কার্যক্রমে আমি থাকব। আমাদের অধিকার নিশ্চিত করার আগে এই লড়াই থামবে না। কোনো রাজনীতিবিদের রাজনৈতিক ফায়দার বলি হয়ে আমি আমার ভবিষ্যৎকে শঙ্কার মুখে পড়তে দেব না। আমরা পিছু হটব না।

আমাদের কাছ থেকে শক্তি কেড়ে নিয়েই রাজনীতিবিদেরা শক্তিশালী হন। তাই আপনার শক্তিটা নিঃশেষ হতে দেবেন না। কখনোই না। এই অসহায়ত্ব যেন আপনাকে নির্বিকার করে না দেয়।

আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, মাঠপর্যায়ে কাজ করুন। নিজেকে বিলিয়ে দিন। যে সংস্থা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছে, নারীকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করছে, তার পাশে থাকুন।

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment