ইবিতে ভালোবাসার প্রীতি বিতর্ক
শাহজাহান নবীন, কুষ্টিয়া : বসন্তের চতুর্থ দিন। পড়ন্ত বিকেল। উন্মুক্ত ময়দানে হাজারো মানুষের উপচে পড়া ভীড় দেখে বোঝার উপায় নেই ভালবাসা নিয়ে এমন কাণ্ড হতে পারে। সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর সামনে সে কি উত্তপ্ত বাকবিতন্ডা! তবে এ বাকবিতন্ডা কোনো তর্ক নয়, যুক্তি আর তথ্যের সমন্বয়ে সাবলীল বক্তব্যে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার আপ্রাণ চেষ্টা। খোলা ময়দানে এতগুলো মানুষ তবুও পিনপতন নীরবতা। মন্ত্র মুগ্ধের মত সবাই শুনছে দুটি দলে বিভক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বিতর্ক। যে বিতর্কের বিষয় ‘বিশ্বায়নের প্রভাবে ভালবাসা পণ্যে পরিণত হয়েছে’। এমনই এক প্রীতি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি)।
আজ (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পেয়ারা তলায় ভালবাসা দিবস প্রীতিবিতর্ক অনুষ্টিত হয়। শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের দাপুটে বিতার্কিকরা এতে অংশ নেন। প্রতীকি সংসদীয় বিতর্কে স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি ইমামূল হাছান আদনান। এতে লালনশাহ হল ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি হাসনাত আসাদুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু হল ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন আনন্দ, সাদ্দাম হোসেন হল ডিবেটিং সোসাইটির সাইফুল ইসলাম ও বেগম খালেদা জিয়া হল ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি ইসমত জেরিন বিনতে নিজাম বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পর্যবেক্ষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইবি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ডিবেটিং সোসাইটির নেতাকর্মী ও সদস্যরাসহ প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এ বিতর্ক উপভোগ করেন। ছায়া সংসদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জিয়াউর রহমান হলের মো. মুসা বিন আয়াতুল্লাহ, প্রেম ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে শাহাদাত হোসেন নিশান, সংসদ সদস্য হিসেবে মুজাহিদুল ইসলাম বিতর্কে অংশ নেন। অন্যদিকে বিরোধী দলের দলনেতা হিসেবে ফজিলাতুন্নেসা সানজিদা নাহরিন, উপ-নেতা ওহিনা মোস্তফা দিপ্তী ও সংসদ সদস্য হিসেবে সামছিয়া আক্তার গতি বিতর্কে অংশ গ্রহণ করেন।
‘বিশ্বায়নের প্রভাবে ভালবাসা পণ্যে পরিণত হয়েছে’ শীর্ষক বিতর্কে উভয় পক্ষ তাদের অনুকূলে জোরালো যুক্তি ও তথ্য, তত্ব তুলে ধরেন। ভালবাসা দিবসের রেশ কাটতে না কাটতেই এমন বিশ্লেষনাত্মক বিতর্ক সকল দর্শকের মন আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়। তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার, সহজলোভ্যতা ও নির্ভরতা মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভালবাসার অনুভূতি সীমাবদ্ধ করেছে বলে সরকার পক্ষ দাবি তোলেন। অন্যদিকে তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার দরুণ উত্তরাধুনিক পৃথিবী তার অধিবাসীদের জন্য আবেগ ও ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করেছে বলে বিরোধী দলের বিতার্কিকরা জোর বক্তব্য তুলে ধরেন। সবশেষে উপস্থিত দর্শকদের কন্ঠভোটে ‘বিশ্বায়নের প্রভাবে ভালবাসা পণ্যে পরিণত হয়েছে’ প্রস্তাবটি ছায়া সংসদে গৃহীত হয়।