প্রযুক্তি উদ্যোগে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে

প্রযুক্তি উদ্যোগে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে

  • বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক

২০১৬ বছরটা উদ্ভাবনের, নতুন উদ্যোগের। প্রযুক্তির নানা প্রতিযোগিতারও। সেটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য যেমন সত্য, বাংলাদেশের জন্যও তা প্রযোজ্য। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশে উদ্যোগ ও উদ্ভাবনে তরুণ প্রজন্মের সাফল্য উল্লেখ করার মতোই। ২০১৬ সালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফল বাংলাদেশি তরুণদের পরিচয় এবং আগামী বছরে তাঁদের পরিকল্পনা এখানে তুলে ধরা হলো।

তন্ময় মল্লিক নাজমুর রশীদ
বুয়েট রায়ো দল
চ্যাম্পিয়ন, এসিএম আইসিপিসি-২০১৭, ঢাকা পর্ব
কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের আয়োজন এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় (আইসিপিসি) অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দল গঠন করতে হবে। শিক্ষকদের পরামর্শে গঠন করা হয় ‘বুয়েট রায়ো’ দল। এই দলে স্থান পেলেন তড়িৎকৌশলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এম এম হারুন-উর-রশিদ এবং কম্পিউটার কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তন্ময় মল্লিক ও নাজমুর রশীদ। নভেম্বর মাসে রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে (ইউএপি) আয়োজিত এসিএম-আইসিপিসির ঢাকা পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়। তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখন দেশের প্রতিনিধিত্ব করে ভালো অবস্থান নিশ্চিত করা। এই সম্পর্কে হারুন-উর-রশিদ বললেন, ‘আমাদের দলের এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। সবাই মিলে প্রস্তুতি নিচ্ছি চূড়ান্ত পর্বের জন্য।’ আর নিজেদের জীবনের লক্ষ্য? আগে উচ্চশিক্ষা শেষ করতে চান, তারপর ঠিক করবেন পরবর্তী গন্তব্য।

হিরোজ অব ৭১ গেমের নির্মাতা দল
পোর্ট ব্লিস
বিজয়ী, কানেকটিং স্টার্টআপ বাংলাদেশ
সারা দেশ থেকে এমন উদ্ভাবনী প্রকল্প খুঁজে নিতে হবে যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার মতো। এমন ভাবনা থেকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কানেকটিং স্টার্টআপ বাংলাদেশের। এতে জমা পড়া ৪৩৪ উদ্যোগ থেকে যাচাই-বাছাই শেষে সেরা দশ উদ্যোগ ঘোষণা করা হয় গত ২৭ জুলাই। এ দশ উদ্যোগের একটি হলো হিরোজ অব ৭১।
আপনি হয়তো এরই মধ্যে নিজের স্মার্টফোনে এই গেম খেলেছেন। যাঁরা একটু-আধটু গেমের খবরও রাখেন তাঁদের সবারই জানা আছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ গেমটি বানিয়েছে পোর্টব্লিস নামের এক প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরেই প্রকাশ পায় ‘হিরোজ অব ৭১’। পোর্টব্লিসের হেড অব অপারেশন (কার্যপ্রধান) তানজিল তাফহীম বলেন, ‘গেম নির্মাণ করাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজ।’ মূলত এখন পর্যন্ত স্মার্টফোনের জন্য গেম বানাচ্ছেন তাঁরা। আগামী বছরে আরও একটি গেম প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন তিনি। পোর্টব্লিসের লক্ষ্য সম্পর্কে তানজিল বলেন, ‘দেশের গেমিং শিল্পকে আরও বড় করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’ ২০১৬ সাল সম্পর্কে তানজীল বলেন, ‘২০১৬ রোমাঞ্চকর ছিল। আগামী বছর আরও বেশি রোমাঞ্চকর একটা বছর হোক তা প্রত্যাশা করছি। আর পোর্টব্লিসের ক্ষেত্রে বলব, আমাদের জন্য অভূতপূর্ব একটা বছর ছিল এ বছর।’ অনেক কিছু অর্জন হয়েছে ২০১৬-এ, যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।

তারেক হাসান, নিজাম উদ্দিন ও মেহেদী হাসান
আরএক্স ৭১
চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণকারী
স্ল্যাশ গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট এক্সিলারেটর ২০১৬
ইউরোপের এ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় মূলত বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোই সুযোগ পায় অংশ নেওয়ার। উদ্দেশ্য সেসব দেশে ইমপ্যাক্ট তৈরি করতে পারে এমন উদ্যোগ বেছে নেওয়া। চলতি বছর বাংলাদেশে আয়োজিত আঞ্চলিক পর্বে কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত হয় দুটি দল। একটি আরএক্স ৭১ অপরটি টেন মিনিটস স্কুল। এর মধ্যে অবশ্য ফিনল্যান্ডে আয়োজিত চূড়ান্ত পর্বে আরএক্স ৭১ কেবল অংশ নিয়েছিল।
এ উদ্যোগ সম্পর্কে আরএক্স ৭১ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা তারেক হাসান বলেন, ‘এটি অ্যাপভিত্তিক ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা। অ্যাপে তথ্য টুকে দিলে স্বাস্থ্যসচেতন করা, রোগ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেওয়া এবং রোগের লক্ষণ অনুযায়ী কোনো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় এতে।’
স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটালাইজড করার উদ্দেশ্যে তারেক হাসানসহ তিনজন মিলে এ উদ্যোগ গঠন করেছিল। অপর দুই সহপ্রতিষ্ঠাতারা হলেন নিজাম উদ্দিন ও মেহেদী হাসান। ২০১৭ সালে এই অ্যাপের মান উন্নয়ন করতে চান এই তিন তরুণ। অ্যাপ থেকে সরাসরি চিকিৎসকের অ্যাপয়নমেন্ট নেওয়া সুবিধা যোগ করতে চান অ্যাপে।

রাইহাত জামান মো. নাফিস সাদিক, নিলয় দত্ত
জেইউ ও-এন-কিউব
চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০১৬
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করতে ভালো লাগত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রাইহাত জামানের। কিন্তু নিজের মতো আরও বন্ধু চাই। তাই তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাফিস সাদিক ও নিলয় দত্তকে। এরপর গঠন করে ‘জেইউ ও-এন-কিউব’ নামের দল। এরপর এই ত্রয়ী আটঘাট বেঁধে নেমে পড়ে। শুরুতেই ধরা দেয় সাফল্য। গত বছর এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং (এসিএম আইসিপিসি) প্রতিযোগিতার ঢাকা পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এরপর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় বলেই জানান রাইহাত জামান। এ আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেনি তা স্পষ্ট হয় এ বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত জাতীয় কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় এই দল চ্যাম্পিয়ন হলে। রাইহাত জামান জানান, ভবিষ্যতে দেশেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করতে চায় তাঁদের দল জেইউ ও-এন-কিউব।

এস এম ফারাবী মাহমুদ, ফাহমিদ মোর্শেদ ফাতিমা ফারিন হক ও মীর ইমতিয়াজ মোস্তাফিজ
‘ফাংশন (এক্স)’ দল।
চ্যাম্পিয়ন, মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপ, বাংলাদেশ
নারীর হাতে ছোট্ট একটি আংটি। তা আবার প্রযুক্তি দিয়ে গড়া। এই বিশেষায়িত আংটি মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করবে। কারণ, এই আংটি গর্ভাবস্থায় মায়েদের হৃৎস্পন্দন পরিমাপ করে সংরক্ষণ করবে যাবতীয় তথ্য। আর জরুরি অবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সরবরাহ করবে পরিজনদের কাছে। এমন ধারণা উপস্থাপন করে এবারের মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপে বাংলাদেশ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় ‘ফাংশন (এক্স)’ দল। এর সদস্যরা হলেন এস এম ফারাবী মাহমুদ, ফাহমিদ মোর্শেদ, ফাতিমা ফারিন হক ও মীর ইমতিয়াজ মোস্তাফিজ। তাঁরা সবাই বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
যন্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মামি রিং’। কীভাবে কাজ করে এটি? ফারাবী মাহমুদ বললেন, ‘ধরুন গর্ভাবস্থায় মায়ের হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে হঠাৎ বেড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই ইমার্জেন্সি ট্রিগার এবং জিএসএম প্রযুক্তির সহায়তায় কেন্দ্রীয় সার্ভারে চলে যাবে সেই তথ্য। কেন্দ্রীয় সার্ভারের তথ্য একদিকে যেমন নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে পৌঁছে যাবে, তেমনি অন্যদিকে প্রসূতির পরিবারের সদস্যের কাছেও পৌঁছে যাবে। এতে করে জরুরি সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা বেড়ে যাবে।’
ফারাবী জানালেন, মূলত এ প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করেই এমন ধারণা বেছে নেন তাঁরা। প্রতিবছরই সারা বিশ্বে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে মাইক্রোসফট। আঞ্চলিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বের ৩০টি দলের সঙ্গে অনলাইনে প্রতিযোগিতায় লড়েন তাঁরা। ফারাবী আরও জানালেন, তাঁরা সবাই শেষ বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে এই মুহূর্তে ব্যস্ত। আশা করছেন আগামী বছরে তাঁদের এই উদ্যোগ আনুষ্ঠিকভাবে যাত্রা শুরু করবে।

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment