চীনে উচ্চশিক্ষা

চীনে উচ্চশিক্ষা

আমাদের দেশে থেকে প্রতি বছর প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থী চীনে পড়তে চান, কিম্বা যেসব অবিভাবক সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পড়াতে আগ্রহী তারা চীনে পড়ানোর সুযোগ নিতে পারেন অনেক সহজেই। চীনের উচ্চশিক্ষা অনার্স ডিগ্রি, ব্যাচেলার্স ডিগ্রি, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, ডক্টরেট ডিগ্রি কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে সাধারণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পেশাগত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেতার ও টেলিভিশন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চীনে তিন হাজার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই সরকারি। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দুই কোটি। বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালই সরকারি। চীনে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন রবিউল কমল


ভর্তির সময়/সেমিস্টার

চীনে স্প্রিং সেমিস্টারে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এবং সামার সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম চলে মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। ডিগ্রি সাধারণ অনার্স ডিগ্রি তিন বছর মেয়াদি। ব্যাচেলার্স ডিগ্রি চার বছর মেয়াদি। মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি।

ভর্তির যোগ্যতা

এইচএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ব্যাচেলার্স ও অনার্সে ভর্তি হতে পারেন এবং এই দুই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেন। চীনে পড়াশুনার জন্য হান ভাষা (চীনা ভাষা) জানা বাধ্যতামূলক। ইংরেজি ও হান ভাষা এই দুই ভাষায় অথবা শুধু হান ভাষায় পড়ানো হয়। এর বাইরেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় টোফেল, জিআরই, জিএমএট, এসএটি স্কোর চায়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভাষার ওপর বাংলাদেশের সার্টিফিকেট কোর্সের সনদ গ্রহণ করে। অনেক বিদেশি ছাত্রছাত্রী চীন যায় ‘হান’ ভাষা শেখার জন্য। চীনে বিদেশি ছাত্রছাত্রীর ৬০ ভাগই হান ভাষা শিখছে নিজ নিজ স্বার্থে। হান ভাষা শেখার জন্য কয়েক সপ্তাহ ও কয়েক মাসের স্বল্পকালীন কোর্স যেমন আছে, তেমনি আছে চার বছরের ব্যাচেোর্স ডিগ্রি। ১৯৯২ সালে ‘পোয়েফল’ হিসেবে পরিচিত হানভাষার মান পরীক্ষা চালু হয়।

1452560594471_314

উচ্চ শিক্ষার বিষয়সমূহ

চীনে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাচেলার্স, অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আর্ট অ্যান্ড আর্ট হিস্ট্রি, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, বায়োলজি, ব্রেইন অ্যান্ড কগনিটিভ সায়েন্স, ক্যামিস্ট্রি, কম্পিউটার সায়েন্স, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ইকনোমিকস, ইংলিশ, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, হেলথ অ্যান্ড সেসাইটি, ম্যাথমেটিকস, ম্যাথেমেটিক্স-এপ্লায়েড, ম্যাথমেটিকস-স্ট্যাটিসটিকস, মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার, মিউজিক, ফিলোসফি, ফিজিকস, পলিটিক্যাল সায়েন্স, সাইকোলজি, সাইকোলজি ক্লিনিক্যাল, সাইকোলজি ডেভেলপমেন্ট, সাইকোলজি স্যোসাল পারসনালিটি, রিলিজিয়ন অ্যান্ড ক্লাসিকস, ভিজুয়াল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, উইমেন স্টাডিজ।

টিউশন ফি

চীনের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা খরচ দেশীয় চীনা ছাত্রদের তিন চতুর্থাংশ বেশি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি বিভিন্ন রকম। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য বার্ষিক টিউশন ফি ফুডিং, লজিংসহ প্রায় সাড়ে ছয় হাজার থেকে সাত হাজার ডলার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক টিউশন ফি প্রায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার ডলার। প্রাক-স্নাতক ডিগ্রিতে পড়াশুনার জন্য আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায় না।

কাগজপত্র

যথাযথভাবে পূরণ করা আবেদনপত্র, সব সনদ ও কাগজপত্রের কপি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অথবা ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের সত্যায়িত সনদপত্র। ভাষার দক্ষতার সনদ। ব্যাংকের আর্থিক স্বচ্ছলতা তথ্যের সনদ। পাসপোর্টের ফটোকপি ও মেডিকেল সাটিফিকেট। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শাখায় যোগাযোগ করলেও তারাই জানিয়ে দেবে কী কী কাগজপত্র লাগবে।

বৃত্তি

চীনে প্রচুর বৃত্তি পাওয়া যায় পড়াশুনার জন্য। এ জন্য সরকারের স্কলারশিপ ডাটাবেজে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের সুযোগ নিতে হবে। এছাড়াও নিয়মিতভাবেই শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যুরো ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বৃত্তি দিয়ে থাকে। সরকারের বৃত্তি ছাড়াও রোটারি ইন্টারন্যশনাল, বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাতিসংঘ, রকফেলার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার বৃত্তির জন্য অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজ-এর ওয়েবসাইটে পরামর্শ পাওয়া যায়।

চীনের কয়েকটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় যা আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জন করেছে

পেইচিং (বেইজিং) বিশ্ববিদ্যালয়, সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়, পেইচিং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়, নান্টং আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় (এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা দেয়া হয়।

favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment