বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

প্রাণী জগতে নতুন এক অমেরুদণ্ডীর সন্ধান পেয়েছেন বাংলাদেশি এক গবেষক; অমেরুদণ্ডী ওই প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইসিস (Victoriopisa bruneiensis)। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বেলাল হোসেনের এই আবিষ্কারের কথা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়ের ‘ব্রুনাই নদীর’ মোহনা থেকে আবিষ্কার ‘ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইসিস’কে আর্থোপোডা পর্বের অ্যামফিপোডা (Amphipoda) বর্গের এবং ভিক্টোরিওপিসা (Victoriopisa) গণভুক্ত প্রজাতি বলে উল্লেখ করেছেন মৎস্য বিজ্ঞানী ড. বেলাল।

ব্রুনাইয়ের নামানুসারে নতুন এই প্রাণীর নামকরণ করা হয় ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইসিস। প্রণীটির বর্ণনায় বেলাল বলেন, দেখতে অনেকটা চিংড়ি সদৃশ। স্বচ্ছ বর্ণের ক্ষুদ্র প্রজাতিটি দৈর্ঘে ১০.৮ মিলি মিটার। অন্যসব অ্যামফিপডস (Amphipods) প্রাণীর মতো তিন খণ্ডে বিভক্ত ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইসিস’র দেহের দুই পাশে চৌদ্দ জোড়া পা রয়েছে, যাকে ‘ওয়াকিং লেগস’ বলে। এগুলো হাঁটা ছাড়াও সন্তরণ, খাবার সংগ্রহ ও নানাবিধ জৈবিক কাজে ব্যবহার করে প্রাণীটি।

ব্রুনাইয়ের উপকূলবর্তী অঞ্চলের খাদ্যচক্রের অন্যতম উপাদান ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইসিস।

ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার ফর মেরিন স্পিসিস এর দেওয়া তথ্য মতে, এ পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার অ্যামফিপডস প্রাণী আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু ড. বেলালের নতুন এ প্রজাতি আবিষ্কারের আগে ভিক্টোরিওপিসা গণভুক্ত প্রজাতি ছিল মাত্র তিনটি।

ড. বেলাল বলেন, ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণাকালীন এ প্রজাতিটি শনাক্তকরণে অ্যামফিপডস টাক্সোনোমিস্ট ড. লরেন হগসও তার সঙ্গে ছিলেন। শনাক্তকরণের পর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য এর গবেষণা লব্ধ ফল ওই বছরই নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘জুটাস্কা’ (Zootaxa) এ পাঠানো হয়। এরপর ওই গবেষণা প্রবন্ধ এ বছর জুন মাসের প্রথম দিকে প্রকাশিত হয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে বলে জানান নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

ভিক্টোরিওপিসা গণভুক্ত এই প্রাণীটির শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এর শুধু এক জোড়া চোখ থাকলেও মাথায় পার্শ্বীয় ‘সেফালিক লভ’ (cephalic lobe) নেই।  কিন্তু শেষ প্রান্তে সরু সিটা রয়েছে। এছাড়া এপিমেরা নামক খণ্ডের পশ্চাৎবক্ষীয় অংশে ছোট ও সূক্ষ্ম কাঁটা রয়েছে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ড. বেলার নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা হাতিয়া থেকে ‘নেফটাইস বাংলাদেশি’ (Nephtys bangladeshi) নামে এনিলিডা পর্বের অন্য একটি পলিকীট আবিষ্কার করেন। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা থেকে নতুন ওই প্রাণীর সন্ধান পাওয়ার কারণে এর নাম ‌‘নেফটাইস বাংলাদেশি’ রাখা হয়।

ড. বেলাল বলেন, “এ পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় দশ হাজার প্রজাতির পলিকীট আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২৯ প্রজাতির তালিকা পাওয়া যায়।” বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চল জীব বৈচিত্র্যপূর্ণ হলেও গবেষণার অপ্রতুলতার কারণে এখনও এসব জীববৈচিত্র্যের তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

২০০৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় উপকূলের জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ শুরু করেন বেলাল। দেশে পলিকীটের নমুনা শনাক্ত করার কোনো যন্ত্র না থাকায় তিনি পাশের দেশ ভারতে যান। ২০১০ সালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে অস্ট্রেলিয়ায় যান। ডিগ্রি শেষে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন।

সূত্র: বিডিনিউজfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment