শোনো ও ভর্তিচ্ছু বন্ধু…

শোনো ও ভর্তিচ্ছু বন্ধু…

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

কদিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। এখন শুরু হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের কাজ। হয়তোবা তোমরা অনেকে এক বুক আশা নিয়ে আবেদনও করেছো কাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত বিভাগে বা ইউনিটে। তোমরা তো জানো বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র অত্যন্ত সীমিত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার জন্য অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়। মুখোমুখি হতে হয় ভর্তি পরীক্ষার মতো এক মহাযুদ্ধের। কিন্তু সামনে সময় খুবই কম। অতএব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করতে হবে। তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতিকে আরো শাণিত করার লক্ষ্যে পরামর্শ দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র আয়াজ আজাদ।


যতই অনুশীলন ততই আত্মবিশ্বাস
অনুশীলন মানুষকে যোগ্য করে গড়ে তোলে। এই সত্য কথাটি আরো বাস্তবে দেখতে পারবে যখন তোমরা অনুশীলন করে নিজেদেরকে যোগ্য করবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য। ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য যথাযথভাবে অনুশীলন করতে হবে। বাকি সময়গুলোতে অহেতুক বিষয়গুলি না পড়ে প্রয়োজনীয় ও অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালভাবে আয়ত্ত করতে হবে। পরীক্ষা পর্যন্ত ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে তোমাদের মনোবল বৃদ্ধিতে অত্যান্ত সহায়ক হবে। পরীক্ষার ২/৩ দিন আগেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরন জেনে নিতে হবে। অতীতে পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো স্টাডি করে যেসব বিষয় বারবার এসেছে, সেগুলোর প্রতি জোর দিতে হবে। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয় সেই সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর জেনে নিতে হবে। জেনে রাখা ভালো-প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ”সাধারণ জ্ঞান” প্রশ্নগুলোতে দুই-তৃতীয়াংশ প্রশ্ন সামপ্রতিক থাকে। এই কারণে সামপ্রতিক বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে আন্তরিকতার সাথে। নতুন কিছু পেলে সাথে সাথে নোট আকারে লিখে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এভাবে পরীক্ষার সম্মুখীন হলে তোমাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যাবে।

মনে রাখার ফাঁদ পাতো
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে সব বিষয় পড়তে হয় বলে অনেক কিছু মনে রাখা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। যদি একটু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে পড়ার ব্যাপারটাকে গুছিয়ে আনা যায় তাহলে তোমাদের মনে রাখাটা অনেকটাই সহজ হবে। প্রশ্নের উত্তর মনে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল সৃষ্টি করতে হবে নিজেকেই। এখন অবশ্যই বাজারে এ ধরনের কিছু বই পাওয়া যায়। চাইলে কিনে পড়ে দেখতে পারো।

সময়ের সুসমবণ্টন অতি দরকারি
তোমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে যে ইউনিটে পরীক্ষা দেবে তার প্রশ্নের ধরন জেনে নিতে হবে। পরীক্ষায় যে সকল বিষয়ের উপর প্রশ্ন আসে তার একটি রুটিন করে নিতে হবে। দিনের এক একটি অংশ এক একটি বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে নিলে সুবিধা হয়। আবার যে বিষয়টিতে প্রস্তুতি অধিকতর হালকা বলে মনে হবে সে বিষয়টির বেশি সময় সিডিউল করাটাই উচিত হবে।

নিজেকে একটু যাচাই করো
পরীক্ষা পূর্ববর্তী সময়ে নিজেকে যাচাই করার উপযুক্ত উপায় হলো মডেল টেস্ট দেয়া। এতে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টি হয়। মডেল টেস্টগুলোর মান ও পরীক্ষা হলের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় এতে। এছাড়া পরীক্ষার হলে কিভাবে কত সময়ে উত্তর দিতে তারও একটি ধারণা পাওয়া যায়।

পরীক্ষা যখন নাকের ডগায়
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় একবারে নাকের ডগায়। আগামী মাস থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এই শেষ মুহূর্তগুলোই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টাকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। হয়তোবা এই সামান্য সময় পারে তোমার জীবনের মোড় পাল্টে দিতে। পারে তোমাকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যেতে।

তুমি যখন পরীক্ষার হলে
প্রথমে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর খুব সতর্কতার সাথে পড়তে হবে। পরীক্ষার হলে অনেক পরীক্ষার্থী তাড়াতাড়ি প্রশ্ন পড়তে গিয়ে প্রশ্নের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ দিয়ে যায়। তাই তাদের এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে। এছাড়া পরীক্ষার কোন অংশে কত সময় ব্যয় করতে হবে তা আগেই নির্ধারণ করে ফেলতে হবে। যে প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জানা আছে সেগুলো আগে উত্তর দিতে হবে। এবার কঠিন প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। দেখবে অনেক কঠিন প্রশ্নও তোমাদের কাছে সহজ বলে মনে হচ্ছে। প্রশ্ন উত্তর দেয়ার সময় তাড়াহুড়া করা যাবেনা। কারণ, এতে অনেক সঠিক উত্তরও ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুল উত্তর দেয়ার জন্য নম্বর কেটে নেয় সে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে উত্তর দেয়ার দরকার নেই। আর যেখানে এই সিস্টেম নেই সেখানে প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে অনুমান করে উত্তর দেয়া যায়। এতে উত্তরটি সঠিক না হলেও ক্ষতির আশঙ্কা নেই। পরীক্ষার হলে অন্যের সাহায্য নিতে যেয়ে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। নিজে নিজে চেষ্টা করাই ভালো। কারণ, অধিকাংশ সময়ই পরীক্ষায় এমন কোনো প্রশ্ন আসে না যা তোমাদের পড়া নেই। সময় শেষ হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়া শেষ হয়ে গেলে বের না হয়ে শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে উত্তরগুলো বারবার দেখ। তাতে কোন ভুল থাকলে তা বের হয়ে আসবে।

টেনশনমুক্ত থাক
পরীক্ষার হলের একটি আলাদা পরিবেশ আছে। সেই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে নিজেকে। খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েও অনেকে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারে না। অনেকে ভর্তি পরীক্ষাটাকে অন্য রকম মনে করে ভয় করে। মনে রাখতে হবে, ভর্তি পরীক্ষা সাধারণ এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার মতই একটি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোনো প্রকার টেনশন করা চলবে না। তাতে পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরীক্ষা দুটোই খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আত্মবিশ্বাস রাখ তুঙ্গে
প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকেই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আত্মবিশ্বাস ভালো না থাকলে ভালো রেজাল্ট করা যায় না। বিশ্বাস রাখতে হবে- তুমি অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভালো ও তোমার কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। আর তোমরা যারা এসএসসি এবং এইচএসসিতে আশানুরূপ ফল করতে পারনি, তোমারা এই ফল নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করো না। এইসব ফলাফলের চেয়ে মূল ভর্তি পরীক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভর্তি পরীক্ষা ভালো হলে ভর্তিও নিশ্চিত।

একই দিনে একাধিক পরীক্ষা
প্রায় সময় দেখা যায়, একই দিনে একাধিক পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষার্থীরা এটা নিয়ে অনেক সময় মানসিক চাপ অনুভব করে। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, এই সময়টা সবার জন্য প্রযোজ্য। ফলে মাথায় কোন চাপ রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। সর্বোপরি তোমরা ভালো প্রস্তুতি নাও ও ভালো পরীক্ষা দাও। ভালো পরীক্ষার মাধ্যমে তোমরা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় আবিষ্কার করবে এটিই আশা করি। আজ পুরো জাতি তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমরা আগামীর দেশের কাণ্ডারি ও দেশ গড়ার কারিগর। আর সেভাবেই নিজেদেরকে গড়ে তুলবে।

সূত্র: যায়যায়দিনfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment