শেখানোর জন্য শেখা

শেখানোর জন্য শেখা

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি সম্প্রসারণ ভবনের নিচতলায় গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (জিটিআই) প্রশিক্ষণকক্ষ ও প্রধান কার্যালয়। কৃষিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়োজিত সম্প্রসারণকর্মী, শিক্ষক, গবেষক, কৃষিবিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালে এই ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে জিটিআই। এর মধ্যে ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, নেপাল ও থাইল্যান্ডের কৃষি কর্মকর্তাদের ১৬টি প্রশিক্ষণ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৮৬০ জন প্রশিক্ষণার্থী জিটিআইয়ের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলী আকবর বলেন, ‘সারা দেশে একটাই প্রতিষ্ঠান, যেটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়। সরকার উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন পর্যন্ত জিটিআই তা করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আমাদের সুদূরপ্রসারী ভাবনা আছে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’

নয় বছর ধরে জিটিআই শিক্ষকদের বনিয়াদি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২৫টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শতাধিক শিক্ষক বনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শামসুর রহমান বলেন, ‘আমি শিক্ষক হওয়ার কিছুদিন পর জিটিআইয়ে বনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে খুব উপকৃত হয়েছি। কীভাবে পিএইচডি স্কলারশিপ পেতে হয়, গবেষণা পদ্ধতি, নতুন শিক্ষক হিসেবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের আচার-ব্যবহার কী হবে, কীভাবে শিক্ষাদান করতে হয়—এসব বিষয়ে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে।’ তবে এ প্রশিক্ষণের সময়সীমা আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও এখানে বনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক সরওয়ার ইকবাল বলেন, ‘আমি দেশে ও দেশের বাইরে অনেক প্রশিক্ষণ নিয়েছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ এককথায় চমৎকার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩১ জন শিক্ষক জিটিআইয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।’

জিটিআইয়ের অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক মাছুমা হাবিব বলেন, ‘শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান নয়, যেকোনো বেসরকারি কৃষিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান তাদের স্টাফদের গবেষণা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে আমরা কৃষি সাংবাদিকতার বিষয়েও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’

এই প্রতিষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, আইটি বিশেষজ্ঞ ও স্বনামধন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষক হিসেবে রাখা হয়। প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের আবাসনের জন্য জিটিআইয়ের রয়েছে ৭৪ শয্যাবিশিষ্ট সুসজ্জিত ডরমিটরি ভবন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও মানসম্মতভাবে পরিচালনার জন্য মিনিবাস, মাইক্রোবাস, তিনটি শ্রেণিকক্ষ, তিনটি ল্যাব, শতাধিক কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়াসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। কৃষি ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও প্রকাশনায় বিশেষ অবদানের জন্য জিটিআই ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক অর্জন করে।

জিটিআই জাতীয় একাডেমি হওয়ার যোগ্যতা রাখে
অধ্যাপক এম মোজাহার আলী
পরিচালক, গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
আমি মনে করি, কাজের ব্যাপ্তি ও প্রশিক্ষণের বিচারে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় একাডেমি হওয়ার যোগ্যতা রাখে। নিজেদের অর্থায়নে কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে না পারা জিটিআইয়ের ব্যর্থতা। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। নিজস্ব কোনো একাডেমিক ভবন না থাকায় জিটিআইয়ের কার্যক্রম পুরোপুরি পরিচালনা করতেও সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। আবার ঢাকা থেকে দূরে হওয়ায় সর্বজনীন এ প্রতিষ্ঠানের প্রচারও কম। সরকারের সুনজর পেলে বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ জিটিআই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি গবেষণা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদান, গ্রামীণ উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে অনায়াসে ডিপ্লোমা কোর্স ও সার্টিফিকেট কোর্স চালু করতে পারে।
সূত্র: প্রথম আলোfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment