ধ্রুবতারার বন্ধুরা

ধ্রুবতারার বন্ধুরা

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

‘ধ্রুবতারা’ আছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে সামনে এগোলে চোখে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘প্রত্যয় একাত্তর’। এটির ঠিক পাশেই ছোট্ট একটি অফিস রুম। ওপরে টিন, চারপাশে লাল ইটের দালান। এখানেই ধ্রুবতারার বন্ধুরা জড়ো হন নিয়মিত। তাঁরা প্রায় ১০০ জন। তাঁদের স্লোগান হলো—‘সংস্কৃতির পাল ছেয়ে, প্রযুক্তির হাল বেয়ে সভ্যতার বন্দরে গাঁথব নোঙর।’

ধ্রুবতারার শুরুটি হয়েছিল আজ থেকে সাত বছর আগে, ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি। ধ্রুবতারার প্রথম সভাপতি ছিলেন টেক্সটাইল বিভাগের ছাত্র রফিকুল ইসলাম। তিনি শুরুর দিকের গল্প বললেন—“শুরু থেকেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আয়োজনে নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় করেছি। এরপর ধীরে ধীরে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন গড়ে ওঠে। প্রথমে গানের জন্য ব্যান্ডদল ‘মাত্রা’, এরপর সিনেমা বানানোর জন্য প্রডাকশন হাউস ‘যাযাবর’, আবৃত্তি-পাগলদের নিয়ে ‘আবৃত্তি সংসদ’, মঞ্চনাটকের জন্য ‘ধ্রুব থিয়েটার’ গড়ে ওঠে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই দলগুলো পারফর্ম করে। এ ছাড়াও আন্তবিশ্ববিদ্যালয়ের নানা আয়োজনেও তারা ধ্রুবতারার ব্যানারে অংশ নেয়।” সংগঠনের এখনকার সভাপতি মাসুদুর রহমান বললেন, “অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েও আমরা ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক চর্চা করে চলেছি। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একটি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ভাঁজপত্র প্রকাশ করেছিলাম। এই কবিতার পত্রিকার নাম ছিল ‘প্র্রতিধ্বনি’। তাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কবিদের লেখা সেরা ১৮টি কবিতা ছাপা হয়েছিল।” তিনি আরো বললেন, ‘আমরা নিয়মিত ফানুস ওড়ানো, ঘুড়ি ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করি।’ কিভাবে ক্লাব চলে—এই নিয়ে তিনি বললেন, ‘আমরা প্রতি মাসে দুটি সাধারণ সভার আয়োজন করি। সেখানে আমাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি কিভাবে ক্লাব চলবে, সেসব নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হয়। সব খরচ সদস্যদের মাসিক চাঁদার টাকা থেকে তৈরি ফান্ড থেকে আসে। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রশাসন ও উপদেষ্টারাও সাহায্য করেন।’

সংগঠন নিয়ে বলতে গিয়ে ব্যবসা প্রশাসনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মাহমুদা সুলতানা বললেন, ‘আবৃত্তি করতে ভালোবাসি বলে ধ্রুবতারাতে যোগ দিয়েছি।’ আরেক সদস্য গণিতের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আসিফ রেজা জানালেন, ‘এখানে এসে আমার অনেক ভালোভাবে কর্মী, সংগঠক ও মেধাবী মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।’ ধ্রুবতারার পক্ষ থেকে ২০১২ সালে ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ, ২০১৪ সালে সাংস্কৃতিক সপ্তাহ, পরের বছর সপ্তাহব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব করা হয়।

ক্লাব নিয়ে বলতে গিয়ে ধ্রুবতারার উপদেষ্টা ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জানালেন, ‘ধ্রুবতারা ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণ। তারা সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করে চলেছে।’ তবে তিনি আফসোস করলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম ও টিএসসি থাকলে তারা আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবে।’ আরেক উপদেষ্টা ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খাদেমুল ইসলাম বললেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে তারা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজ করে চলেছে। জাতীয় দিবস, বিভিন্ন ব্যক্তিদের স্মরণে অনুষ্ঠান, সাংগঠনিক সপ্তাহ, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ পালন করছে। এসব আসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অংশ নেন, দর্শক হিসেবে থাকেন।’

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment