ক্যাম্পাসে আমরা দুজন!

ক্যাম্পাসে আমরা দুজন!

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক 

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) আমার প্রথম দিন নিয়ে লিখতে বসে মনে পড়ল, এখানে তেমন আলাদা করে বলার মতো কোনো ‘প্রথম দিন’ ছিলই না! এমআইটির ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছেছি ২০১৫ সালের আগস্টের ২১ তারিখ। সেদিন থেকে সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ, প্রথম ক্লাসে হাজির হওয়ার দিনটি পর্যন্ত প্রতিদিনই কোনো না কোনো ‘প্রথম’-এর অভিজ্ঞতা উপভোগ করেছি।

এমআইটিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সব সময়ই এ দেশের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সপ্তাহ খানেক আগে এসে পৌঁছে যায়। তাই আমি যখন এখানে এসেছি, তখনো ক্যাম্পাস ৯০ শতাংশ ফাঁকা। আমার নির্ধারিত হলে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, সাড়ে তিন শ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সেখানে আছি কেবল দুজন, আমিসহ! এত বড় ভবনে একা থাকার কোনো মানে হয় না। মজার ব্যাপার হলো, এখানে আসার আগে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার সুযোগে সহপাঠীদের অনেককে আগে থেকেই চিনতাম। তাই এসেই পরিচিতদের খুঁজে বের করার ‘অভিযানে’ নেমে পড়ি। নতুন-পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আশপাশটা ঘুরেফিরে কীভাবে কীভাবে যেন দুটো সপ্তাহ কেটে গিয়েছিল।

আমাদের মহাকাশ প্রকৌশল বিভাগ একটি জলরকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার সুবাদে শুরুতেই আমার অনেক নতুন বন্ধু জুটে গিয়েছিল। এমআইটির শত শত ক্লাবের মধ্যে কোনটা ছেড়ে কোনটাতে যোগ দেব, এ নিয়ে আমরা সবাই ছিলাম দারুণ রোমাঞ্চিত। চলছিল তুমুল আলোচনা।

এমন করেই একসময় ক্লাস শুরু হয়ে যায়। আমাদের একটা বড় সুবিধা হলো, এখানে নিজের ইচ্ছেমতো ক্লাস বেছে নেওয়া যায়। প্রথম দিনই আমার জেনেটিকস আর অ্যাবস্ট্রাক্ট অ্যালজেব্রার মতো পুরোপুরি আলাদা দুটো বিষয়ের ক্লাস পড়েছিল। পরপর দুই ঘণ্টায়, পরিচিত হয়েছি একেবারে ভিন্ন বিষয়ের দুজন অধ্যাপকের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হলো, নিজেদের ক্ষেত্রে দুজনই পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। প্রথম ক্লাসে তাই আলোচনার বিষয়ের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় লাগছিল তাঁদের পড়ানোর ধরন, বিষয়টির প্রতি তাঁদের ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা। তাই তো প্রথম দিন ক্লাস শেষে যা মনে হয়েছিল, এখনো মনেপ্রাণে সেটাই বিশ্বাস করি। এখানে স্বপ্ন আর স্বপ্নের গল্পের কোনো শেষ নেই, কেবলই শুরু। কারণ বাকিটা লেখার দায়িত্ব তো ইতিহাসই নিয়ে নিচ্ছে!

নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ

দ্বিতীয় বর্ষ, এমআইটি, যুক্তরাষ্ট্রfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment