অসহায়ের সহায় ক্রিটিকালিংক

অসহায়ের সহায় ক্রিটিকালিংক

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

আচমকা দুর্ঘটনা। প্রয়োজন জরুরি সাহায্য। কিন্তু সাহায্য করার মতো কেউ কোথাও নেই। এমন অসহায় মুহূর্তে স্রেফ আপনার মুঠোফোন থেকে পাঠানো একটি বার্তায় চলে আসবেন সদা প্রস্তুত একদল স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরাই আপনার প্রাথমিক সেবা দেবেন, প্রয়োজনে নিয়ে যাবেন চিকিৎসকের কাছে।

দুর্ঘটনায় আহত মানুষের জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্রিটিকালিংক। এই সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় এক হাজার তরুণ। শুধু চিকিৎসাসেবাই নয়, শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক নানা কাজও করে থেকে ক্রিটিকালিংক।

ab57a9430ab72fc9cff8bb6e735acf55-actor-arefin-shoovo-band-ambassador-of-criticalinkশুরুর কথা জানতে চাই ক্রিটিকালিংকের সহপ্রতিষ্ঠাতা রাহাত হোসেনের কাছে। রাহাত শোনান ২০১৪ সালের মার্চ মাসের একটা দিনের কথা। রাহাত বলেন, ‘সেদিন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আয়োজন করেছিল প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির। সেখানেই পরিচয় হয় মার্কিন তরুণী জেনিফার ফেরেলের সঙ্গে।’

রাহাত ও জেনিফারের এক হওয়ার কারণ, তাঁদের দুজনের আগ্রহের বিষয় একই। কয়েক মাস পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর হার কীভাবে কমিয়ে আনা যায়—তা নিয়ে কাজ করার। এরপর জেনিফার ফেরেল রাহাত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ক্রিটিকালিংক। জেনিফার ফেরেল এখন ক্রিটিকালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আর রাহাত কর্মসূচি সমন্বয়ক। ১২ অক্টোবর রাজধানীতে ক্রিটিকালিংকের কার্যালয়ে কথা হয় রাহাত হোসেনের সঙ্গে।

জেনিফার ফেরেল এখন নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। ই-মেইলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া গেল ক্রিটিকালিংক সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও লিংক। ‘বাংলাদেশে মোবাইল প্রযুক্তি কীভাবে জীবন বাঁচাতে পারে’ শিরোনামে জেনিফার বক্তব্য দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে, রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। সেখানেই তিনি সবিস্তারে বলেছেন তাঁর উদ্যোগ সম্পর্কে—‘আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছিলাম। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় ফার্স্ট এইডের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বলা চলে, এখানকার তরুণেরা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।’

২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জেনিফার ফেরেলও মর্মাহত হয়েছিলেন। তিনি তখন কাজ করতেন আফ্রিকায়। তখন আবার বাংলাদেশে আসেন। দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা করেন—কীভাবে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের একটি জায়গায় নিয়ে আসা যায়। সে গবেষণা থেকেই ধারণা পান ক্রিটিকালিংক প্রতিষ্ঠার।

আবার ফিরে যাই রাহাতের কাছে। তিনি জানালেন, জেনিফার জীববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর মেডিসন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন টুলান বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাহাত হোসেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে।

dc35e6978241a2ab513243f296ad1a61-training-at-eastern-university-1ক্রিটিকালিংকের তৈরি করা মোবাইল অ্যাপ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত ‘জাতীয় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন পুরস্কার ও ডেভেলপার সম্মেলন ২০১৫’-এ প্রথম স্থান অর্জন করে ‘স্বাস্থ্য’ বিভাগে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্বীকৃতিটাও পেয়েছে গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনে। সেখানে ১৭৮টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এই উদ্যোগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘স্বাস্থ্য’ বিভাগে।

কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্রিটিকালিংকের স্বেচ্ছাসেবক মো. আবু সুফিয়ান, ‘এখানে ফার্স্ট এইড সম্পর্কে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো হয়। মূলত আমরা প্রথমেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিড় কমিয়ে আহত ব্যক্তিকে মুক্ত বাতাস নেওয়ার সুযোগ করে দিই। এরপর প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দিই। দরকার পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

সংগঠনটির ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারা ৫৭২ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে। প্রশিক্ষণ দিয়েছে ১ হাজার ৮৬৬ জনকে এবং স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ৯৬৩ জন। এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরী, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সহায়তা করছেন। বড় আয়োজনেও থাকে ক্রিটিকালিংকের উপস্থিতি।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থ পায় সংগঠনটি। আবার করপোরেট প্রশি​ক্ষণ দিয়েও আয় করে ক্রিটিকালিংক। রাহাত হোসেন জানান, ধাপে ধাপে এ সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে।

যেভাবে পাবেন সেবা

0e0e8d9616617e11bdc326a5cb3b4d7d-criticalink-team-in-sher-e-bangla-stadium-for-medical-serviceসেবা দেওয়া হয় দুইভাবে। ক্রিটিকালিংকের কল সেন্টারে ফোন করে (০৯৬৭৮৭৮৭৮৭৮) এবং ক্রিটিকালিংক অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যাপের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ক্রিটিকালিংক (Criticalink) অ্যাপ নামিয়ে শুরুতেই নিবন্ধন করতে হবে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে। এরপর অ্যাপটিতে ঢুকলেই কল করা যাবে সাহায্যের জন্য। দুর্ঘটনার তথ্য জানানোর জন্য ‘রিপোর্ট অ্যাকসিডেন্ট’ বিভাগে গিয়ে তথ্য দিতে হবে। সাহায্য চাওয়া ব্যক্তি নিজেই আহত নাকি প্রত্যক্ষদর্শী, কীভাবে আহত হয়েছেন—মূলত এ ধরনের তথ্যই জানাতে হবে। ঘটনাস্থলের ঠিকানা জানা না থাকলেও সমস্যা হবে না। গুগল ম্যাপসের সাহায্যে খুঁজে পাওয়া যাবে কোন জায়গা থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এরপর বার্তা চলে যাবে ক্রিটিকালিংকের স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে।

অ্যাপটির ‘ফার্স্ট এইড টিপস’ বিভাগেও জানার সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক অবস্থায় কী চিকিৎসা দেওয়া হবে।

অ্যাপ দিয়ে কাছের থানাতেও জানানো যাবে দুর্ঘটনার খবর। একই সঙ্গে জানা যাবে সবচেয়ে কাছে কোন হাসপাতাল রয়েছে। অ্যাপ নামানোর ঠিকানা: goo.gl/Rqlnsm

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment