খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়াবে এসএপি : কাজী সারাজিন

খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়াবে এসএপি : কাজী সারাজিন

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এবং বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে অনেক ক্ষেত্রেই কাজের সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। এর অন্যতম কারণ বিশ্বমানের এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার ব্যবহার না করা। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের পথেও বড় বাধা। তবে আশার কথা হলো, দেশের অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের এসএপি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয়ের পাশাপাশি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। 


বাংলাদেশে এসএপির সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে এসএপির স্থানীয় প্রতিনিধি এসএস সলিউশন (প্রাইভেট) লিমিটেড। গত সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের ৫৬টির বেশি প্রতিষ্ঠান এসএপি সফটওয়্যার সংযোজন করেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সারাজিন ব্র্যাটয্‌লার বাংলাদেশে এসএপির সম্ভাবনা ও নিজের পরিকল্পনার কথা এনটিভি অনলাইনের কাছে তুলে ধরেন। তাঁর অপর পরিচয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি ও কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনের মেয়ে। তবে বাবার পরিচয় থেকে বেরিয়ে তিনি নিজের আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছেন।

প্রশ্ন : আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলুন।

কাজী সারাজিন : আমার কোম্পানির নাম এসএস সলিউশন (প্রাইভেট) লিমিটেড। এটি জার্মানির প্রতিষ্ঠান এসএপির স্থানীয় প্রতিনিধি। এসএপি প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। ১৯৭২ জার্মানির ওয়ালডর্ফে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৩০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির শাখা আছে। আর প্রতিষ্ঠানটির সেবা পাচ্ছে ১৯০ দেশের দুই লাখ ৯১ হাজার প্রতিষ্ঠান। এসএপি ৪০০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। এটি এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্লানিংয়ের (ইআরপি) মার্কেট লিডার। ইআরপি টার্মটি ৪২ বছর আগে আবিষ্কারই হয়েছে এসএপির মাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে এদের মার্কেট শেয়ার ৫৭ শতাংশের ওপর।

এটি কি শুধু ইআরপির ক্ষেত্রে?

অ্যাপ্লিকেশনস-এর ক্ষেত্রে। জার্মানি, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসএপির সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। বিশ্বের ৭৫ শতাংশ আর্থিক লেনদেন এসএপি সফটওয়্যারে সম্পন্ন হয়। মোবাইলসহ যে কোনো ধরনের লেনদেনই এর অন্তর্ভুক্ত। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, নাসা, স্যামসাং ফোন, টয়োটা, মার্সিডিজসহ বিশ্বের বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলোর অধিকাংশই এসএপিতে চলে। তবে এগুলো বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিক মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ভারতের কথা বলা হলে অনেকটা প্রাসঙ্গিক মনে হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সরকার ও বড় বড় শিল্প গ্রুপ এসএপি ব্যবহার করছে। দেশটিতে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কর্মচারীর মাধ্যমে দেড় কোটি মানুষের কাছে এসএপির ২০০টি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এসএপির সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভারতে প্রতিদিন ৮০ লাখ সরকারি পরিবহনের টিকিট বিক্রি হয়, ১২৫টি এয়ারপোর্ট নিয়ন্ত্রিত হয়। ভারতে সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহনের ২৩ শতাংশ মালামাল পরিবহন, ৪৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত হয় এসএপি সফটওয়্যারে। এ ছাড়া ভারতের ২০টি তেল শোধনাগারের ১৮টিই এসএপির সফটওয়্যারে চলে। এসএপির সফটওয়্যারের দেশটির ৭০ শতাংশ স্টিল উৎপাদনের কাজ পরিচালিত হয়। এ ছাড়া এসএপির অর্থনৈতিক ও মানসম্পদ উন্নয়ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ। আমরাও যেন ২০২০ সালে বলতে পারি বাংলাদেশ চলে এসএপিতে।

এসএপি গ্লোবাল সফটওয়্যার সাপোর্ট। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে বিকাশ করছে, কোম্পানি যেভাবে বিকাশ করছে এখন শুধু এক্সেল ও টালি দিয়ে ব্যবসা চালানোর পর্যায়ে নেই। বিশ্ব এখন প্রচণ্ড প্রতিযোগিতামূলক। এখনো দেশে একটি কোম্পানির অর্ধেক নষ্ট হওয়া নিয়ে কাড়াকাড়ি হচ্ছে। আমরা তৈরি পোশাক খাত ও ওষুধশিল্পকে টার্গেট করেছি। এই দুটি খাতকে চীন, ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়ক হবে এসএপি। এসএপি সফটওয়্যারে চালানো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ কমে এবং কর্মদক্ষতা ও মুনাফা বাড়ে।

এসএপি কী? এটি কি ইন্টারনাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমায়?

এসএপির মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের পুরো কার্যক্রম ও উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর নজরদারি করা যায়। এটি ইন্ট্রিগ্রেটেড সিস্টেম তাই ইনভেন্টরি ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা করা যায়। মূল যন্ত্রপাতিরও ব্যবস্থাপনা করা যায়। এসবের ফলে প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও পণ্য উৎপাদন বাড়ে। ইনভেন্টরি কমে যায়। ইনভেন্টরি কমে যাওয়া মানে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল কমে যাওয়া। মনে করুন ইনভেন্টরি রাখতে হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা। এতে ব্যাংকঋণের বোঝা বাড়ছে। এটি কমে ৫০ কোটি হলে অবশ্যই ঋণের বোঝা হালকা হয়।

বাংলাদেশ পেডরোলো পাম্পের ক্ষেত্রেই ধরা যাক, প্রতিষ্ঠানটি এসএপি নেওয়ার আগে ও পরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ব্যয় অনেক ক্ষেত্রে কমে গেছে। তৈরি পোশাক খাতের ভিয়েলাটেক্সের ওয়েস্টেজ অনেক ক্ষেত্রে কমে গেছে। বিশ্বের অন্যতম প্রতিষ্ঠান কোক, পেপসি এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও উৎপাদন ব্যয় কমে যাওয়ার নজির আছে। ভারতের মিত্তাল, টাটা, রিলায়েন্স প্রতিটি প্রতিষ্ঠানও এসএপিতে চলে।

একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন এসএপি কোনো আইটি প্রজেক্ট নয়। বরং এটি বিজনেস ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বিভাগ বা এর মালিককে এসএপি চালাতে হবে।

বাংলাদেশে এসএপির ভোক্তা কারা হতে পারে?

দেশের বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান তো আছেই, যারা ব্যবস্থাপনার সমস্যায় ভুগছে। গত সাড়ে তিন বছরে ৫৬টির বেশি প্রতিষ্ঠান এসএপি নিয়েছে। সরকারি খাতেও এটি ব্যবহারের সুযোগ আছে।

৫৬টি প্রতিষ্ঠানের সরকারি ও বেসরকারি কয়টি?

অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক, কর্ণফুলী সার কারখানা। এনবিআরের ট্যাক্সেশনে সেপ্টেম্বরে পাইলট চালু হবে। পাবলিক সেক্টরে আমাদের আরো অংশগ্রহণের চেষ্টা থাকবে। তবে আমার টার্গেট হলো ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশে প্রচুর। এর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ঘোষণা করছি। বিশেষ দামে এসএপি দেওয়া চেষ্টা করছি, যেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এটি কিনতে পারে। একটি বিশ্বমানের ইআরপি নিতে গেলে তিন কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন হয়। আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশের জন্য এটি ৭০ লাখের মধ্যে নিয়ে আসতে। তবে এই টাকাও একবারে দিতে হবে না। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে ছয়-সাত মাস সময় লাগে।

আপনিই কি প্রথম বাংলাদেশে এসএপি এনেছেন?

এসএপির স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে আমরাই প্রথম। এর আগে কেউ এসএপি কিনতে চাইলে সরাসরি প্রতিষ্ঠানটি থেকে কেনার সুযোগ ছিল। যেমন ভিয়েলাটেক্স পাঁচ বছর আগে এসএপি কিনেছে। তবে একবার নিলেই এটি শেষ নয়। চলতি বছর মার্চেও তারা কিছু সফটওয়্যার নিয়েছে।

একটি প্রতিষ্ঠান এসএপি কেনার পরবর্তী সার্ভিস কীভাবে দেওয়া হয়?

ইআরপিতে তিনটি বিষয় থাকে। একটি হলো এসএপি সফটওয়্যার। আরেকটি বড় বিষয় হলো সার্ভিসিং। সফটওয়্যার প্রয়োগ করতেই পাঁচ-ছয় মাস সময় লাগে। তৃতীয় বিষয়টি হলো হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রপাতি। সফটওয়্যারটি চালাতে কিছু যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়। ম্যাক, উইন্ডোজসহ সব ব্যবস্থাতেই এসএপি সফটওয়্যার চালানো যায়। সফটওয়্যারটির সাফল্য নির্ভর করে সার্ভিসের ওপর। এই মুহূর্তে আমাদের স্থানীয় রিসোর্সে ঘাটতি আছে। ভারত থেকে রিসোর্স আনা হচ্ছে। স্থানীয় রিসোর্স হলে সফটওয়্যারের দাম কমানো সম্ভব হবে। স্থানীয় রিসোর্স বাড়ানোর লক্ষ্যেই মে মাসের ৫ তারিখে চালু করা হয়েছে এসএপি এডুকেশন একাডেমি। আমাদের করপোরেট অফিসের পাঁচতলায় অফিসটি চালু আছে।

বর্তমানে সার্ভিস কীভাবে দেওয়া হচ্ছে?

বর্তমানে বাইরের রিসোর্স এনে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয়ভাবে রিসোর্স তৈরি করা হচ্ছে। একাডেমির মাধ্যমে এই কাজ চলছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ রেট রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এসএপির জন্য ফাইন্যান্স, এইচআর, সাপ্লাই চেন বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে পড়ে আসা শিক্ষার্থীরা উপযোগী। ফাইন্যান্স থেকে পাস করে আসা একজন শিক্ষার্থীর এসএপি কোর্স করা থাকলে ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক করছি। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে ৩০ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণ করতে যাচ্ছে। এই অর্থ দিয়ে ওরাকল, মাইক্রোসফট বা এসএপিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষকে এসএপিতে প্রশিক্ষিত করে তুলছে। এতে বাইরে গিয়ে কাজ করার সুযোগ বাড়বে।

এসএপি এডুকেশন একাডেমিতে কত মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে?

লক্ষ্য অনেককে প্রশিক্ষণ দেওয়া। তবে সেই অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আর্থিক বিষয়টিও চিন্তায় রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামেই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে। তারা অ্যাপ্রুভ করলে বছরে ৩০ হাজার মানুষকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে।

প্রশিক্ষণের ধরন কেমন হবে?

তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দুটি বিষয়ই প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রশিক্ষণের সময়সীমা হবে দুই থেকে পাঁচ মাস। এ ছাড়া কয়েকদিনেই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার সুযোগ আছে। কেউ চাইলে অনলাইনেও প্রশিক্ষণের সুযোগ নিতে পারেন।

দুই থেকে পাঁচ মাসের প্রশিক্ষণে কে অর্থ দেবে?

অবশ্যই প্রশিক্ষণার্থীকে অর্থ দিতে হবে। গ্লোবাল সার্টিফিকেশন একটি স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেশন। সব জায়গায়ই এটি সমান ব্যয় হয়। সার্টিফিকেশন নিতে সর্বোচ্চ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এর ওপর বিভিন্ন বিষয় নির্ভর করে। তবে আমরা চাচ্ছি সাত থেকে আট হাজারের মধ্যে ট্রেনিং দিতে। তবে এ ক্ষেত্রে গ্লোবাল সার্টিফিকেশন হবে না। তবে তাঁরা ট্রেনিং পাবেন। তবে সার্টিফিকেশন কোর্স করার পর দেশের বাইরেও কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

কোনো তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে এসএপি সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা হবে?

কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিনিয়ত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবে। এর ফলে কোনো সমস্যা সৃষ্টির শুরুতেই তাঁরা এ সম্পর্কে জানতে পারবে। এতে সমস্যার সমাধানও হবে সহজেই। এসএপির মাধ্যমে বুক ক্লোজিং একদিনে সম্পন্ন করা যাবে যা করতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগে। এসএপির এমন সুবিধার কথা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলে ধরা হবে।

বাংলাদেশের মার্কেটে সম্ভাবনা কতটা?

বাংলাদেশের মার্কেট অনেক সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল করার পেছনে বিনিয়োগ করছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেক বিনিয়োগ করা হয়েছে। হার্ডওয়্যার ও অবকাঠামোতে ইনভেস্ট করা হয়েছে। এখন প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হবে। এসএপি ৪০০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হলেও এর সার্ভিসের কথা চিন্তা করলে এটি তিনগুণ।

আপনি কীভাবে এসএপির সঙ্গে যুক্ত হলেন?

আমার ব্যাকগ্রাউন্ড আইটি নয়, পদার্থবিজ্ঞান। আমেরিকার জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি থেকে আমি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি নিই। আর ২৩ বছরের পর থেকেই আমি বাবার সঙ্গে স্টিল ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। আমার স্বামী জার্মান। সে ১০ বছর ধরে জার্মানির এসএপিতে কাজ করছে। বাংলাদেশে আসার সময় সে এখানে এসএপির সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখে। এ থেকেই আমরা এসএপির পার্টনারশিপে কাজ শুরু করি। আমাদের সৌভাগ্যবান বলতে হবে, কারণ আমরা এমন সময়ে এসেছি যখন এখানে মার্কেট তৈরি হয়েছে। পুরোপুরি না বুঝলেও বাংলাদেশিদের কাছে এসএপি একদম অপরিচিত কিছু নয়।

বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পশ্চিমা বিশ্বে রপ্তানি বাড়াতে চায়। এটি করতে চাইলে তাদের কমপ্লায়েন্স সম্পন্ন হতে হবে। এ জন্য বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার প্রয়োজন।

বাংলাদেশে এসএপির গ্রোথ কেমন হচ্ছে?

ভালোই। প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রা সম্পন্ন করা হচ্ছে এবং পরবর্তী বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। এসএপির সঙ্গে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওদের দিক থেকেও অনেক সাপোর্ট আসে। ওদের অনেক দক্ষতা আমাদের প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশের মার্কেট সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়? সামনে কী আশা করছেন?

আগেই আমি বলেছি। আমার লক্ষ্য হচ্ছে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান। গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছি। বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন-স্কয়ার, রবি, রহিমআফরোজ, গ্রামীণফোন, বসুন্ধরা, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনসেপ্টা এগুলো এসএপিতেই আছে। কিন্তু বাংলাদেশ মানে শুধু বৃহৎ প্রতিষ্ঠানই নয়, বাংলাদেশে ছোট ও মাঝারি অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আমার লক্ষ্য। কারণ এটিই বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৮০ শতাংশ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বল্প বাজেটে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে চাই। প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হয়ে বড় হলে আমাদেরও লাভ। কারণ ওদের আরো সফটওয়্যার ও সার্ভিস প্রয়োজন হবে। আমাদের প্রতিটি ভোক্তাই পরবর্তীতেও আমাদের সেবা গ্রহণ করবে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এসএপিকে খরচ হিসেবে না ধরে ইনভেস্ট হিসেবে ধরা।

আপনার লাভ কীভাবে হবে? বিক্রির কমিশন?

মূলত এসএপির লাভ হবে। আমরা অংশ হিসেবে লাভ পাব।

কোনো সফটওয়্যার তো প্রতিবছর হালনাগাদ (আপডেট) করতে হয়? এখানেও তো অর্থ লাগবে?

এই অর্থ সরাসরি এসএপিকে দিতে হবে। শুধু এসএপিই নয়, সব বিশ্বমানের সফটওয়্যার ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। প্রতিবছর সফটওয়্যারের দামের ২২ শতাংশ মূল্য দিতে হবে যা সরাসরি এসএপির কাছে যাবে। কারণ এই অর্থ গবেষণা ও উন্নয়নের কাজে ব্যয় হয়। প্রতিবছর এসএপি ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করে।

স্থানীয় যাঁরা কিনছেন তাঁদের সেবা কীভাবে দেওয়া হবে?

স্থানীয় কিছু রিসোর্স আমাদের আছে তবে এটি যথেষ্ট নয়। এই জন্যই চলতি বছর ট্রেনিং একাডেমি খোলা হয়েছে। যেমন কেউ একজন এসএপি কেনার পরপরই প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষণ চাইল। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা নিলাম। পরে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নতুন করে প্রশিক্ষণ চাইলেও সেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরা এসএপির কোনো সমস্যার সমাধান করতে না পারলে কী হবে?

সে ক্ষেত্রে এসএস সলিউশন আছে। তবে আমরাও না পারলে পার্টনারের কাছ থেকে সাপোর্ট নেওয়া হয়। তবে প্রশিক্ষণের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। লেভেল-১ প্রশিক্ষণ আমরা নিজেরাই দিতে পারব। তবে লেভেল-২ ট্রেনিংয়ের জন্য এসএপির  কাছ থেকে লোক আনতে হবে। প্রতিবছর ২২ শতাংশ মূল্য দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার এসএসপির কোনো সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে থাকা এসএপি ল্যাবের পক্ষ থেকে ভোক্তা প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার মনিটর করা হচ্ছে। এমনকি এসব ল্যাব থেকে সিস্টেমের সমস্যা হওয়ার আগেই সমস্যার কথা জানিয়ে দেওয়া হবে।

কোনো সংবাদমাধ্যম কি এসএপিতে চলছে?

বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের মতো বড় মিডিয়াগুলো এসএপিতে চলে। প্রতিরক্ষা, রাসায়নিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং, ইনস্যুরেন্স, সার্ভিস, টেলিকম, তেল-গ্যাস উৎপাদন বিপণন অনেক ক্ষেত্রেই এসএপি ব্যবহার হয়। প্রতিষ্ঠান ভেদে সফটওয়্যারেরও পরিবর্তন হয়।

কোনো প্রতিষ্ঠান এসএপি নিলে এটি সম্পূর্ণ চালু করতে কতদিন লাগবে?

কোনো প্রতিষ্ঠান প্রথমে সফটওয়্যার কিনে নেবে। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের কাজের পদ্ধতি আমরা পর্যবেক্ষণ করব। পরে আলোচনার ভিত্তিতে কাজ করার সঠিক পদ্ধতি ঠিক করা হবে। সফটওয়্যারে পরিবর্তন যতটা সম্ভব কম করা হবে। প্রতিষ্ঠানের কাজের পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা করে তথ্য নিয়ে যাওয়া হবে। ওই অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে।

বর্তমানের আপনাদের কতজন কর্মী আছে?

রিসোর্স ও সেলস টিম মিলিয়ে ৩৫ জনের মতো আছে।

স্থানীয় ভোক্তাদের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কী হবে?

দ্রুত চলতে হবে। কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে। উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। মুনাফা বাড়াতে হবে। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment